বরিশাল-ভোলার সীমান্তবর্তী মহিষমারী গ্রামে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দুই গ্রামবাসী ও পুলিশের মধ্যে ত্রি-মুখী সংঘর্ষ ও গুলি বর্ষনে ৮ নারী সহ ১৫ জন আহত হয়েছে। ত্রি-মুখী সংঘর্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে বরিশাল-ভোলা যৌথ ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা ২৮ রাউন্ড গুলি ছুড়লে কয়েক জন গ্রামবাসী গুলিবদ্ধি হয়। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে নারী সহ ১২ জনকে বিকেল ৫টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের খবর পেয়ে ভোলা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ফরহাদ সরদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। তিনি জানান, সীমানা বিরোধকে কেন্দ্র করে বরিশাল – ভোলার সীমান্তবর্তী মহিষমারী গ্রামের একটি চরের অস্থায়ী বাসিন্দাদের সাথে ভোলার চরচটকিমারা গ্রামের বাসিন্দাদের সাথে বিবাদ চলে আসছিলো। ঐ ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার দুপুরে সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে যায়। এসময় গ্রামবাসী অতর্কিত ভাবে পুলিশের উপর হামলা চালালে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে। খবর পেয়ে থানার থানার ওসি সহ অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ইউনিয়ণ চেয়ারম্যান সহ স্থানীয়দের সহায়তায় সন্ধ্যায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হয়। ভোলা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এনায়েত হোসেন বলেন, শ্রীপুর এবং ভেদুরিয়ার মধ্যবর্তী একটি ব্রিজ রয়েছে। ব্রিজের দুই প্রান্তের জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দুই জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলমান রয়েছে। কিন্তু বিরোধপূর্ণ জমিতে বালু ভরাট করে ঘর নির্মাণ করছিলেন শ্রীপুরের রুবেল কাজী। এতে বাধা দেয় ভেদুরিয়ার বাসিন্দারা। তিনি আরও বলেন, গতকাল ঘটনার সময় রুবেল কাজী স্থানীয় অসংখ্য নারী-পুরুষ নিয়ে বিরোধপূর্ণ জমি দখল করতে যাচ্ছিলেন। এসময় সীমান্তে দায়িত্বে থাকা বরিশাল এবং ভোলা জেলা পুলিশের সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। এতে তাদের সাথে থাকা বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শর্টগান থেকে ২৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। এতে কেউ গুলিবিদ্ধ হয়নি। তবে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছে। তবে কতজন আহত হয়েছে সে বিষয়টি খোজঁ নিয়ে পরবর্তীতে জানানো হবে। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক কবির উদ্দিন বলেন, গতকাল বিকাল ৫টার দিকে ১২ জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শ্রীপুর ইউনিয়নের চৌকিদার মাহেব হোসেন বলেন, শ্রীপুর ইউনিয়নের রুবেল কাজী তার লোকজন নিয়ে ভোলার ভেদুরিয়ার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। এসময় তাদের সাথে বিভিন্ন অস্ত্র ছিলো। সীমানার মধ্যবর্তী স্থানে থাকা বরিশাল ও ভোলা জেলা পুলিশের যৌথ পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের বাধা প্রদান করে। এক পর্যায়ে রুবেল কাজীর লোকেরা পুলিশের ওপর হামলা করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি করে। শের-ই-বাংলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ আহতরা জানান, নদী ভাঙনে তাদের ঘরবাড়ি বিলিন হয়ে গেছে। বরিশাল-ভোলা সীমান্তবর্তী মহিষমারী গ্রামে চরের মধ্যে প্রায় দুইশত ঘর রয়েছে। শ্রীপুরের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রুবেল ও বর্তমান চেয়ারম্যান হারুন মোল্লা দ্বন্দ্বের জেরে এ সংঘর্ষ ঘটেছে। শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ মোল্লা বলেন, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ এবং ভোলা সদরের ভেদুরিয়া এলাকার সীমানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলছে। স্থানীয় রুবেল কাজী দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল এবং ভোলার অংশের জমি দখলের চেষ্টা করে আসছে। এ নিয়ে প্রায়ই দুই জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে হামলা এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল দুপুরে পুনরায় হামলা ও গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ ক্যাম্পে হামলা করে। এসময় পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়। তখন পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পাল্টা গুলি করে। অভিযোগ অস্বীকার করে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি রুবেল কাজী বলেন, ঘটনার সময় আমি মেহেন্দিগঞ্জে ছিলাম। এর আগে আমি বরিশালে অবস্থান করছিলাম। পূর্বেও বরিশাল-ভোলার সীমানা নিয়ে একাধিকবার হামলার ঘটনা ঘটে। কিন্তু এবার গুলি বর্ষণের ঘটনা প্রথম। পুলিশ বিনা উসকানিতে গ্রামবাসীর ওপর গুলি করেছে। তিনি বলেন, যেখানে গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সেখান থেকে পুলিশ ক্যাম্পের দূরত্ব অন্তত দুই কিলোমিটার। ভোলার পুলিশ বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের মহিষমারি গ্রামের মধ্যে ঢুকে নারী-পুরুষের ওপর অতর্কিত হামলা এবং গুলিবর্ষণ করেছে।
এতে আটজন নারীসহ মোট ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আহতরা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।