বরিশালটুডে ডেস্ক: সংকট পিছু ছাড়ছে না দেশের চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর। আগ্রাসী বিনিয়োগ, আমানত ফেরত দিতে সময় ক্ষেপণ বা পর্ষদের প্রভাব খাটিয়ে ঋণ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে। অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় চলছে কয়েকটি ব্যাংক। ব্যাংকগুলোতে ঋণের পরিমাণ যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণও।
২০১৩ সালে নয়টি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরমধ্যে দেশীয় উদ্যোক্তাদের মালিকানায় ছয়টি এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের মালিকানায় রয়েছে তিন ব্যাংক। এসব ব্যাংক নিয়েই উঠছে যত অভিযোগ। কোথাও আগ্রাসী বিনিয়োগ, পর্ষদে প্রভাব খাটানো কিংবা অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে।
সেসময় দেশীয় উদ্যোক্তাদের পরিচালনায় অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলো হলো- মধুমতি, মিডল্যান্ড, ইউনিয়ন, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স, মেঘনা ও পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক)। প্রবাসীদের মালিকানায় অনুমোদন পায় এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড। এরমধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় পড়েছে পদ্মা ব্যাংক। ব্যাংকটির মোট ঋণের প্রায় ৬০ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত চতুর্থ প্রজন্মের নয় ব্যাংক ৪৬ হাজার ৮১৩ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছিল। এরমধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয় ৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এরপর বাড়তে থাকে ঋণের পরিমাণ। একই সঙ্গে বাড়তে থাকে খেলাপি ঋণের পরিমাণও। পরের বছর ২০১৯ সালে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৪ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয় ৫ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা।
২০২০ সালে মোট ঋণ দাঁড়ায় ৫৯ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকায়। খেলাপি হয় ৪ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। ২০২১ সালে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৯ হাজার ৬০৪ কোটি টাকায় এবং খেলাপি দাঁড়ায় ৫ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। ২০২২ সালে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮০ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা যার মধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকায়।
সর্বশেষ তথ্য মতে, ২০২৩ সালের মার্চ প্রান্তিক শেষে এসব ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮২ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৬ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা।
ব্যাংক ভিত্তিক হিসাবে দেখা গেছে, পদ্মা ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। খেলাপি ৩ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ৫৯ দশমিক ২৭ শতাংশ।
একই সময়ে (মার্চ প্রান্তিক শেষে) ইউনিয়ন ব্যাংক বিতরণ করে ২২ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৮৫২ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। মেঘনা ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণ ৩ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা যার মধ্যে খেলাপি ৩৫৫ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ। মিডল্যান্ড ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৩৩ কোটি টাকা, খেলাপি ১৬৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। সাউথ বাংলা ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা। খেলাপি ৩৯৭ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
এছাড়া এনআরবি ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ২১৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি ৩০৭ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৩ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৬৭২ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার ৮২ কোটি টাকা। খেলপি ঋণে পরিণত হয়েছে ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ বা ৩৫৫ কোটি টাকা।
এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (এফইপিডি) ও সহকারী মুখপাত্র মো. সারোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের (বাংলাদেশ ব্যাংক) নিয়মিত ইন্সপেকশন দল ব্যাংক পরিদর্শনে যায়। কোনো ব্যাংকে খেলাপি বেশি হলে দিক-নির্দেশনা দেয়। তাছাড়া খেলাপি বেশি হওয়া মানে ব্যাংকের নিজের জন্যই বোঝা। তাকে প্রভিশন রাখতে হয়, লাভ কমে যায়। আমাদের পক্ষ থেকে সব ব্যাংকের জন্য একই নির্দেশনা রয়েছে। কোনটি চতুর্থ প্রজন্ম বা দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্যাংক, সেটি দেখা হয় না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ব্যাংকখাত বিশ্লেষক ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোকে দেওয়া শর্ত মানতে হবে। তাদের দেওয়া শর্ত মানতে অনিহা রয়েছে। আবার রাজনৈতিক কারণে এসব ব্যাংকের ওপর হস্তক্ষেপও করতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ব্যাংকগুলোর সঙ্কট বাড়ছে। তবে সঙ্কট কাটাতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নজরদারি বাড়াতে হবে। খেলাপি কমাতে নিতে হবে আরও কঠোর পদক্ষেপ।