জমির নামজারির জন্য ঘুষ বেঁধে দিলেন এসিল্যান্ড-পিরোজপুর

বরিশালটুডে ডেস্ক: ভূমির নামজারির জন্য সরকারি ফি ১ হাজার ১৭০ টাকা। কিন্তু পিরোজপুরের নাজিরপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) খরচ বাবদ ৬ হাজার টাকা বেঁধে দিয়েছেন। এ বিষয়ে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সভার নির্দেশনামূলক বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

এদিকে এসিল্যান্ড ইত্তেফাককে বলেন, সভায় ‘এমন আলোচনা হয়নি, এটা দুঃখজনক’ দাবি করলেও পিরোজপুরের জেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ও উপজেলা প্রশাসন কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একাধিক কর্মকর্তা জানান, গত জুলাইয়ে নাজিরপুর উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান। সেখানে তিনি ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের সামনে ‘নামজারির খরচ’ নিয়ে নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।

জানা যায়, জমি খারিজ বা নামজারি করতে সরকার নির্ধারিত খরচ ১ হাজার ১৭০ টাকা হলেও না‌জিরপু‌রের বিভিন্ন ইউ‌নিয়ন ভূমি কার্যালয়গুলোর তহ‌শিলদাররা দলিল ভেদে নেন ৫ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা। পর্যন্ত অথচ নামজারির আবেদনের জন্য কোর্ট ফি ২০ টাকা, নোটিশ জারি ফি ৫০ টাকা, রেকর্ড সংশোধন বা হালকরণ ফি ১ হাজার টাকা ও প্রতি কপি মিউটেশন খতিয়ান সরবরাহ বাবদ ১০০ টাকার বাইরে আর কোনো খরচ নেই। তবে চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ না দিলে ভূমি কার্যালয় থেকে জমির নামজারি করতে পারেন না ব‌লে অ‌ভি‌যোগ আছে অনেকেরই এমন‌কি ভুক্তভোগীরা আরও জানান, জ‌মির খাজনা (দা‌খিলা) দেওয়ার জন্য গে‌লেও ইউনিয়ন ভূ‌মি অফি‌সে দি‌তে হয় ঘুষ।

ভাইরাল হওয়া অডিওতে একজনকে বলতে শোনা যায়, এখন আমাকে পরিষ্কার করে একটি বিষয় আপনাদের অবগত করতে হবে, আমি ইউএনও স্যারের চাপে আছি। ধরেন, আমার অফিস থেকে নামজারিতে অতিরিক্ত আদায় বন্ধ করা হলো। আপনারা পার কেসে যে ডিল করেন। এটা আপনারা নিশ্চিত করবেন কীভাবে যে আপনারা টাকা নিচ্ছেন না। আপনাদের মতামত শুনি। আপনারা কী চান। কত করে নেওয়া হোক?

ওই কণ্ঠ আরও বলেন, খোলামেলা আলোচনা করেন, মতামত দেন, সবাই এখানে উপস্থিত আছেন। যদি বলেন, স্যার, আপনি যদি না করে দেন তাহলে নিশ্চিত করব আমরা কোনো টাকাপয়সা লেনদেন করব না। কিন্তু বাস্তবে এটা কখনো হবে না। আপনারা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন। কাজ করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই খরচ আছে এবং বিভিন্ন ধরনের বিষয় আছে। যেটার কারণে এটা নিতে হচ্ছে বা নিচ্ছেন। এটা কমবেশি সবাই নিচ্ছে। কিন্তু এটা যে এই অফিসে দেওয়া হইতেছে বিধায় আপনারা এটাকে বড় আকারে একটা কিছু করবেন, এই ধরনের অভিযোগ আসলে আমার জন্য বিব্রতকর।

এ সময় ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা তাদের মতামত তুলে ধরেন। একজনের কাছে প্রথম কণ্ঠ (এসি ল্যান্ড) বলেন, ধরেন, একজনের দুই একর জমি আছে। তার কাছ থেকে নামজারির ক্ষেত্রে কত টাকা নেবেন? যেহেতু তার জমি বেশি, তার কাছ থেকে বেশি টাকা নেবেন?

জবাবে ওই ইউনিয়ন কর্মকর্তা বলেন, সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। আরেকজন বলেন, আগে ৫ হাজার ছিল। আপনি অনুমতি দিলে এখন ৪ হাজার নিতে পারি। আপনি স্যার যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, আমরা সেভাবে করব।

এরপর ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তা (এসি ল্যান্ড) বলেন, ধরেন, আমি ৪ হাজার নির্ধারণ করে দিলাম। আপনারা কত করে ডিল করবেন। ক্লিয়ার কথা বলেন।’ তখন একজন বলেন, ‘সর্বোচ্চ ৬-এর বেশি আমরা নেব না।

তিনি (এসি ল্যান্ড) তখন বলেন, আপনারা সঠিকভাবে বলেন, আপনারা কত টাকা করে নিতে চান। যে স্যার এই টাকা না হলে আমাদের আসলে চলবে না। আমি আমার দিক থেকে প্রস্তাব করব, আপনারা সাড়ে ৫ হাজার করে নেন। আমার এখানে ৪ হাজার দেবেন। আপনারা দেড় হাজার নেবেন।

পরে সেটা দলিলপ্রতি ৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। তখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ৬ হাজার মানে ৬ হাজারই। ৬ হাজার ১০০ টাকা হলে পরবর্তী সময়ে আমি ব্যবস্থা নেব।

বক্তব্যের শেষ অংশে তাদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আপনারা একটা রেজিস্টার রাখবেন ইন্টারনাল ইউজের জন্য। এটা আর কোথাও ইউজ হবে না।

অভিযুক্ত মাসুদুর রহমান ভাইরাল হওয়া সেই অডিও সম্পর্কে বলেন, তাদের সঙ্গে আমার এমন কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়নি। এছাড়া এখানে খাসজমি উদ্ধারসহ কিছু কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সেই কার্যক্রমগুলো শুরু করতে গিয়ে দেখি যে বিভিন্ন ধরনের রোষানলের শিকার হচ্ছি।

নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জীব দাশ বলেন, অডিওর বিষয়টি একদিন আগে জেনেছি। অভিযোগটি গুরুতর। এসিল্যান্ডকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।