দক্ষিণাঞ্চলে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী ডেঙ্গু শনাক্ত করাতে হাসপাতালগুলোতে মানুষের ভিড়

শাহীন হাফিজ,

জুলাই মাসের শুরু থেকে বরিশালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভাগের ৬ জেলার হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রন্ত রোগী। বিশেষ করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ধারন ক্ষমতার দ্বিগুন রোগী ভর্তি রয়েছে। আর ডেঙ্গু রোগ শনাক্তের জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্যাথলজি বিভাগে ভিড় করছে মানুষ।

গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ জন এ নিয়ে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৮৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন এছাড়াও পটুয়াখালী জেলায় ৫৪, ভোলায় ১৮, পিরোজপুরে ৩৬, বরগুনায় ২০ ও ঝালকাঠিতে ৭ জন আক্রান্ত হয়েছে।

এ নিয়ে বরিশাল বিভাগে চলতি মাসে মোট ৯৯৬ জন রোগী ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। এর মধ্যে ছাড়পত্র নিয়েছে ৭৬৭ জন আর বর্তমানে হাসপাতালে রয়েছে ২২৮ জন। গতকাল রবিবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে উদ্বেগজনক হারে ডেঙ্গু বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে রোগ নির্ণয় করতে ভিড় করছে মানুষ। রবিবার বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, চলতি জুলাই মাসের শুরু থেকে এ হাসাপাতালে ৯২ জন নারী ও পুরুষের ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এর আগের মাসে অর্থাৎ জুন মাসে ৭৪ জন ডেঙ্গু পরীক্ষা করালে তাদের ১০ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়।

এছাড়া বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সাধারন রোগীদের পাশাপাশি প্যাথলজি বিভাগের সামনে লাইনে দাড়িয়ে আছে ডেঙ্গু পরিক্ষা করাতে আসারাও। হাসপাতাল সূত্রে জানাগেছে, ঈদের পর থেকে চলতি জুলাই মাসে এখন পর্যন্ত ৭৫ জন নারী ও পুরুষ ডেঙ্গু শনাক্ত করতে এসেছেন। অনেকে জ¦র অনুভব, পেটে ব্যাথা, বমি হওয়ার কারনে ডেঙ্গু হতে পারে এমন ধারনা নিয়ে হাসপাতালে এসছেন পরীক্ষা করাতে। এ ৭৫ জনের মধ্যে জেনারেল (সদর) হাসপাতালে প্যাথলজি বিভাগে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ৪ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।

হাসপাতাল কতৃপক্ষ বলছেন যারা পরীক্ষা করাতে আসছেন তাদের বেশির ভাগই ঢাকায় বসবাস করেন। ঈদের আগে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে এসেছিলেন ১৩ জন ব্যাক্তি। তবে এদের মধ্যে কারও রিপোর্টই পজেটিভ আসেনি। ঈদের ছুটিতে অনেকে ঢাকা থেকে বরিশাল এসেছেন এদের মধ্যেই রোগ শনাক্তের হার বেশি।

এ বিষয়ে জেনারেল (সদর) হাসপাতালের টেকনোলজিষ্ট ল্যাব ইনচার্জ এমডি নওয়াব হোসেন বলেন, ঈদের পর থেকে ডেঙ্গু রোগ শনাক্ত করতে ভিড় করছে মানুষ। আমরা সরকার নির্ধারিত ১০০ টাকা ফি নিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাচ্ছি। রবিবার সকাল থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ৬ জনের ডেঙ্গু স্যাম্পল সংগ্রহ করেছি। এছাড়াও বরিশাল নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, উপজেলা স¦াস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ডায়গনিষ্টিক সেন্টারগুলোতে ডেঙ্গু রোগ শনাক্তের জন্য ভিড় করছে মানুুষ।

বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের ডেঙ্গু ইউনিটে চিকিৎসারত মুক্তা বেগম ইত্তেফাককে জানায়, ঢাকার একটি জুতার কারখানায় তিনি কাজ করেন। ঈদের দুদিন আগে জ¦র অনুভব করায় হাসপাতালে ডেঙ্গু পরিক্ষা করান এবং রিপোর্ট পজেটিভ আসে। ঢাকায় তিনি একা থাকেন বলে বরিশালে পরিবারের কাছে চলে আসে। জ¦র বেড়ে যাওয়ায় ঈদের ৩য় দিন শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হয়।

বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, নানা সংকটের মধ্যেও ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থান সংকটের কারণে ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা স্থানে চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। তাই সীমিত সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু রোগীদের যাবতীয় সমস্যা সমাধানসহ তাদের চিকিৎসায় সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নার চালু আছে। ডেঙ্গু ওয়ার্ড প্রস্তুতের কাজ চলছে। এসময় তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের ছোটখাটো সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। অচিরেই তাদের সংকট দূর হবে। ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় ‘সেল সেপারেটর’ যন্ত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা আমাদের নেই। শুধু আমাদেরই নয় বরিশাল বিভাগের কোন সরকারি হাসপাতালে ‘সেল সেপারেটর’ যন্ত্র নেই। এ কারণে যাদের রক্তের প্লাটিলেট ভেঙ্গে যায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করতে হচ্ছে। এই যন্ত্রটি সরবরাহ করার জন্য মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। এখনও সাড়া পাওয়া যায়নি। ‘সেল সেপারেটর’ যন্ত্র পেলে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় সংকট কাটবে বলেও জানান তিনি।

বরিশাল বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, উপজেলা পর্যায়েও রোগীদের জন্য সরকারিভাবে ডেঙ্গু পরীক্ষা ও মশারি সরবরাহ করা হচ্ছে। চিকিৎসা নিয়ে সংকট নেই। আমাদের সবাইকে শুধু বাড়তি সতর্ক থাকবে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের আশঙ্কা সামনে বরিশালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে এটা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। সবাই এই রোগ সৃষ্টির বিষয়ে সচেতন হলে ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।