অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে ‍এ্যাম্বুলেন্স চালক, কর্তৃপক্ষ নিরব

দ্বিগুণ ভাড়া না দিলে চলে না সরকারি অ্যাম্বুলেন্স

বিরিশালটুডে ডেস্ক: অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষযটি প্রকাশ্যে হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

বরিশাল নগরীর মধ্যে সরকারি হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া ৩০০ টাকা এবং নগরীর বাইরে গেলে প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা। তবে এই নিয়ম মানছে না কেউ। রোগী বহনের জন্য আগে চালকের সঙ্গে চুক্তি করতে হয়। তার চাহিদা মতো টাকা তাকে অগ্রিম দেয়ার পর তিনি অ্যাম্বুলেন্সে রোগী তোলেন। বিনিময়ে তিনি কোনো রসিদ দেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চালক বলেন, রোগীর অবস্থা খুব গুরুতর হলেই তার স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্স খোঁজেন। তখন তাদের টাকার রসিদ নেয়া কিংবা এ নিয়ে কথা কাটাকাটির সুযোগ থাকে না। আর এই সুযোগে চালকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করেন।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, নগরীর মধ্যে রোগী বহনের জন্য কমপক্ষে ৫০০ টাকা না দিলে অ্যাম্বুলেন্সের চাকা ঘোরে না। নগরীর বাইরে গেলে স্থানভেদে ভাড়া আদায় করা হয় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক জসিম হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তার দাবি তারা সরকারি নিয়মেই ভাড়া নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার কোন সুযোগ নেই। কারো বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৬ হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা নেন। তাদের সেবার জন্য সরকারি সাতটি অ্যাম্বুলেন্স আছে। কিন্তু চালক না থাকায় ৪টি প্রায়ই থাকে বন্ধ। যদিও বন্ধ থাকার কথা অস্বীকার করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. এসএম সাইফুল ইসলাম।

একই অবস্থা সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ক্ষেত্রেও। সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, তাদের হাসপাতালে দুটি অ্যাম্বুলেন্স চালু আছে। তবে চালক একজন। তাই দুটি অ্যাম্বুলেন্স একই সাথে চলে না।

এদিকে নগরীর বাইরের ৯ উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু থাকলেও কোথাও সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে রোগী বহন করতে চালকদের চাহিদা মতো ভাড়া গুণতে হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের ।

মুলাদী থেকে বরিশাল জেলার দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। প্রতি কিলেমিটারে ১০ টাকা ভাড়া হলে সরকার নির্ধারিত ভাড়া দাঁড়ায় ৩০০ টাকা। সে হিসাবে মুলাদী থেকে বরিশালে আসা-যাওয়া ৬০০ টাকা এবং ফেরি ভাড়াসহ সর্বোচ্চ ১ হাজার পর্যন্ত নেওয়ার কথা। কিন্তু মুলাদী থেকে বরিশালে রোগী বহন করার জন্য ভাড়া নেওয়া হয় ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।

মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইয়েদুর রহমান বলেন, তার জানা মতে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না।

এদিকে গৌরনদী থেকে বরিশাল পর্যন্ত সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া ৪২০ টাকা। নেওয়া হচ্ছে ১,২০০ টাকা। একইভাবে বাকেরগঞ্জ, বানারীপাড়া, বাবুগঞ্জ ও উজিরপুর উপজেলায় সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে রোগীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সরকারি ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন করে রোগীর স্বজনের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া উচিত। চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে থাকলে সেটা অন্যায়। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে অভিযুক্ত চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।