দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬ উপজেলায় নির্বাচনে ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে : সিইসি


বরিশালটুডে ডেস্ক: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬ উপজেলায় নির্বাচনে ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। মঙ্গলবার (২১ মে) বিকেলে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।

সিইসি বলেন, আজ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সারা দেশে ১৫৬ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার মধ্যে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট হয়েছে ১৩২ উপজেলায় এবং ইভিএম মেশিনে ভোট হয়েছে ২৪ উপজেলায়।

নির্বাচনে সহিংসতার তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে দু-এক জায়গায় হাতাহাতি হয়েছে। এসব ঘটনায় এক থেকে দুজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কিন্তু নির্বাচনকে ঘিরে উল্লেখযোগ্য সহিংসতা হয়নি। নির্বাচন মোটামুটি ভালো এবং শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ভোটের হার নিয়ে সিইসি বলেন, ভোটার উপস্থিতির হার ৩০ শতাংশের উপর হতে পারে। সঠিক এবং নির্ভুল তথ্য আগামীকাল পাবেন। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রশাসন খুব তৎপর ছিল। প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য ছিল। এর মধ্যেও কোথাও কোথাও মিডিয়ার কিছু কর্মী আহত হওয়ার খবর আমরা শুনেছি। বিভিন্ন অনিয়মে যখন তারা সাহস করে ছবি তুলতে গিয়েছেন তখন হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। তবে সঠিক তথ্য এখনো পাইনি। বিচ্ছিন্ন হাতাহাতির কারণে ৩৩ জনের মতো আহত হয়েছেন। এর মধ্যে এক থেকে দুজনের অবস্থা গুরুতর হতে পারে।

তিনি বলেন, গতকাল (সোমবার) রাতে একটি ঘটনায় একজনের হাত কেটেছে। সেটা আমি স্বচক্ষে দেখেছি, বেশ গুরুতর আঘাত। তবে আজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুব তৎপর ছিল। যেখানে অনিয়ম বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে সেখানে তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন। এ পর্যন্ত মোট আটক করা হয়েছে ২৫ জনকে। অন্যায়ভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার কারণে ১০ জনকে তাৎক্ষণিকভাবে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ভোটকেন্দ্রে একজন সাধারণ ভোটার এবং একজন আনসার সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন উল্লেখ করে সিইসি বলেন, দুজন নিহত হয়েছেন। তবে সেটি ভোটকেন্দ্রের সহিংসতাকে কেন্দ্র করে নয়। আমরা তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। ভোট কম পড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড় একটি রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যে এবং ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে। তারা জনগণকে ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের চেষ্টা থাকতে পারে।

ভোট নিয়ে কোনো সংকট নেই জানিয়ে সিইসি বলেন, সংকট হচ্ছে রাজনীতিতে। আমি মনে করি— রাজনীতি যদি ভালোভাবে প্রবাহিত হয় তাহলে আগামী দিনে ভোটের যে স্বল্পতা সেটি কেটে যাবে। যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশে যারা ভোটার তাদেরকে স্বশাসন বুঝতে হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে নিজেরাই নিজেদের পরিচালিত করবে। এটি হচ্ছে সচেতনতা এবং গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।

তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করি— রাজনীতিতে যে সংকট রয়েছে সেটি একসময় কাটিয়ে ওঠা যাবে। সুস্থ ধারায় দেশের সামগ্রিক রাজনীতি প্রবাহিত হবে। ভোটাররা উৎসাহিত হবেন। উৎসাহব্যঞ্জক পরিবেশে ভোটাররা কেন্দ্রে আসবেন।

সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুস্পষ্ট কোনো অভিযোগ এখনো আমাদের কাছে আসেনি। তবে কোথাও কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের সুনির্দিষ্টভাবে নাম এবং তথ্য দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

সিইসি আরও বলেন, দ্বিতীয় ধাপের ১৫৬ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে তিন পদে এক হাজার ৮২৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬০৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৯৩ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৯৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এর আগে সকাল ৮টায় শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এবারের নির্বাচনে অধিকাংশ উপজেলার ভোটকেন্দ্রে ছিল ভোটার খরা। এ ছাড়া বিভিন্নস্থানে গুলিবর্ষণ, সংঘর্ষ ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আটকসহ কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।

সারা দেশে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অনেক কম। এ নির্বাচনে ১৫৬টি উপজেলায় ১৩ হাজার ১৫৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০ হাজার কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট কাস্টিং হয়েছে। দুপুর ১টায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম এ তথ্য জানান। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে রাজশাহী, রাজবাড়ী, লক্ষ্মীপুর, লালমনিরহাট, ফরিদপুর, কুমিল্লা, পটুয়াখালী, নেত্রকোণা, জামালপুরসহ অধিকাংশ জেলার উপজেলায় সারাদিন ভোটার উপস্থিতি দেখা গেছে। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।