প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যায্য বিচার চেয়ে বরিশালে প্রতিবন্ধী রত্তনের সংবাদ সম্মেলন


স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভিক্ষার অর্থে পৈতৃক সম্পত্তিতে নির্মাণ করা বসতঘর ও জমি দখল করে নিতে না পারে। বাড়িতে প্রবেশ রাস্তা নির্মাণের দাবীসহ নানা সমস্যা তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী রত্তন হালদার (৪৯)।

সোমবার (৩ জুন) সকাল ১১ টায় বরিশাল অশ্বিনী কুমার (টাউন হল) এর সামনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি ও বরিশাল জেলা প্রশাসক মোঃ শহিদুল ইসলাম এর কাছে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইনগত ন্যায্য বিচারের দাবী জানিয়েছেন প্রতিবন্ধী রত্তন। থানা পুলিশের কাছে গিয়ে সহযোগিতা না পেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বলে জানান। বরিশাল এয়ারপোর্ট থানার অর্ন্তভূক্ত চন্দ্রপাড়া গ্রামের মৃত. হরিচরণ হালদার এর ছেলে তিনি।

লিখিত বক্তব্যে প্রতিবন্ধী রত্তন জানায়, ২০০২ সালে বাবা অসুস্থ হয়ে মারা যায়। তখন আমার বাবুগঞ্জ দেহেরগতি ইউনিয়নের রানী স্কুলের সামনে একটি মুদি দোকান ছিল। মা মতি সন্দোসী হালদার অসুস্থ বাবাকে নিয়ে প্রায়ই ডাক্তারের কাছে যেতেন। হঠাৎ একদিন মা বাবাকে নিয়ে রহমতপুর রেজিষ্ট্রি অফিসে গিয়ে ৩৫ শতাংশ জমি তার নামে দলিল করে নেন। ২০০৭ সালে ওয়ারিশ সূত্রে পৈতৃক সম্পতি নিজ নামে রেকর্ড করি। ২০০৩ সালে বাবা মারা যাবার পরই মা ও তিন বোন স্থানীয় ধীরেন ঘরামী, নিকুঞ্জ রায়, শুভংকর বৌদ্ধ, নির্মল বিশ্বাস, সমির বিশ্বাস, ঝন্টু বিশ্বাস, ধীরেন ব্যাপারী, দিলীপ মন্ডল, সুমন হাজারী, স্বপন হাজারী, জসিম সরদার, নাসির সরদার এদের কুপরামর্শে আমাকে এলাকা ছাড়া করার মিশন নেয়। তারা ষড়যন্ত্র করে ভেঙ্গে ফেলেছে আমার সুখের সংসার। নির্যাতন চালিয়ে স্ত্রীর গর্ভের সন্তান করেছে নষ্ট। এ সব ঘটনা মামাকে জানাতে আমি ভারত চলে যাই। মামা আমার চিকিৎসা করায়। ৩ মাস পর ভারত থেকে এসে স্ত্রীর মুখে শুনি, তাকে ৩ জনে মিলে ধর্ষণ করেছে। স্ত্রী না বললে আমি জানতাম না। স্ত্রী সত্য কথা বলায় তাকে নিয়ে সংসার করি। পরে আমার স্ত্রী ৭ মাসের গর্ভবর্তী হয়। হঠাৎ একদিন ধীরেন ঘরামীর নেতৃত্বে ওই সব লোকজন আমার স্ত্রীকে মুদি দোকান থেকে নামিয়ে টেনে হেচড়ে মারধর করে উলঙ্গ করে মৃত্যু হয়েছে ভেবে পুকুর পাড়ে ফেলে রাখে। ধীরেন ঘরামীর ভয়ে এ সময় এলাকার কেউ এগিয়ে আসেনি। কারণ, জমির জন্য ২০০৫ সালে তার চাচতো ভাইকে খুন করে ফেলেছিল। গর্ভবর্তী আহত স্ত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জমি বিক্রি করে ভারত চলে যাই। চিকিৎসাসহ সকল খরচ মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। ধীরেন ঘরামীর হামলার কারণে এ সব ব্যয় হয়েছে। ভারত বসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার স্ত্রী কণ্যা সন্তান প্রসব করে। পৈতৃক ভিটায় ফিরে আসার পর আবারও আমার মা বোনরাসহ ধীরেন ঘরামী নানাভাবে অত্যাচার শুরু করে। জ্বালা যন্ত্রণা সহ্য না করতে পেরে গুঠিয়া এলাকায় গিয়ে ভাড়া থাকি। তখন আমাদের সংসারে এক ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণ করে। কয়েক বছর পর ধীরেন ঘরামী আবারও ভাড়ার বাসায় গিয়ে অত্যাচার শুরু করে। তখন গুঠিয়া এলাকার ভাড়ার বাসা ছেড়ে বরিশাল নথুল্লাবাদ এসে একটি দোকান নেই। এখানে এসেও হত্যার হুমকি দেয় ধীরেন ঘরামী। এ সময় আমার স্ত্রী দোকানের ক্যাশ টাকা নিয়ে আমাকে ছেড়ে বড় মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যায়। সেই থেকে আমার স্ত্রী ও মেয়ে জীবিত না মৃত তা জানি না।

বাড়ির রাস্তা না থাকায় নিজ বাড়িতে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে পারি না। রাস্তা করতে দেয় না দেহেরগতি গ্রামের মৃত. এছাহাক সরদারের ছেলে বিএনপি নেতা জসিম সরদার। জমির বিরোধ নিয়ে জসিম আমাকে একাধিকবার হত্যার হুমকি দিয়েছে। জসিমের ভয়ে রাতের বেলায় নিজ এলাকায় যাই না। জসিমের কু পরামর্শে আমার মা অনেক জমি বিক্রি করে ফেলেছে।

বাবা অসুস্থ থাকা অবস্থায় ৩৫ শতাংশ জমি মা দলিলমূলে নিলেও জমির রেকর্ড আমার নামে। আর রেকর্ডীয় সম্পত্তিতে রয়েছে আমার ভিক্ষা করে উর্পাজন করা অর্থে নির্মিত ২য় তলা ফাউন্ডেশনের ভবন। রুম রয়েছে ২টি। টাকার অভাবে ভবনের বেশিভাগ কাজই সম্পন্ন হয়নি। আমার একটি ছেলে রয়েছে প্রসেনজিৎ (১৬)। এখন আমার মা ওই শুভংকর বৌদ্ধ ও স্বপন হাজারীর কাছে এই জমি বিক্রি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এবং দলিল দিয়ে জমি রেকর্ড তার নামে করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমার মা এলাকার ওই সব লোকজনের কুবুদ্ধিতে এমন কাজ করলে ভবিষ্যতে আমাদের মাথা গোজার ঠাঁই থাকবে না। কথা ছিল ওই জমিতে চাষাবাদ হবে। আমাকে প্রসেনজিৎ এর সাথে আমার মা-বোনরা যোগাযোগ করতে দেয় না।