বরিশালে জাপা ও শ্রমিকলীগ নেতার পিস্তল নিয়ে ধস্তাধস্তি

জাপা ও শ্রমিকলীগ নেতার পিস্তল নিয়ে ধস্তাধস্তি

স্টাফ রিপোর্টার: বরিশালে জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক ও সিটি কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট এ কে এম মুরতজা আবেদীনের উপর অতর্কিত হামলার অভিযোগ উঠেছে মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রইজ আহম্মেদ মান্নার বিরুদ্ধে। এসময় মুরতজার লাইসেন্সকৃত পিস্তল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টাও করেন মান্না। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে রইজ আহম্মেদ মান্না জানান, উল্টো তার উপর হামলা করে গুলি করার চেষ্টা করেছে মুরতজা।

গতকাল রবিবার বেলা ১২টার দিকে বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডে সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় পিস্তলসহ মুরতজা আবেদীনকে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এদিকে এই ঘটনায় দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

কাউন্সিলর এ কে এম মুরতজা আবেদীনের করা ৮ মিনিটের ভিডিওতে দেখা যায়, ভূমি অফিস থেকে মুরতজা আবেদীন বের হওয়ার সময় ভূমি অফিসের সামনে রইজ আহম্মেদ মান্না ও তার অনুসারীদের অবস্থান করতে দেখেন। তারপর দুজনের মধ্যে কিছু কথা হয়। এরপর মান্না মুরতজার উদ্দেশ্যে নানা কথা বলতে থাকেন। মান্নার স্ত্রীকে মারধর করা হয়েছে বলে মুরতজার দিকে অভিযোগ ছোড়া হয়। একপর্যায়ে মান্না মুরতজাকে তুই সম্বোধন করে কথা বলা শুরু করলে কথা কাটাকাটি হয় এবং মান্না ও তার সহযোগিরা মুরতজা আবেদীনের উপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে মান্না একটি ব্যাটারী চালিত অটোর মধ্যে মুরতজা আবেদীনের কাছ থেকে পিস্তল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে বেশ কিছু সময় ধস্তাধস্তি হয়। পরে মান্নার এক সহযোগী পিস্তলটি নিয়ে যায়।

এদিকে ফেসবুকে ছড়ানো অপর একটি ৫৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি ব্যাটারি চালিত অটোর মধ্যে মান্না ও মুরতজার মধ্যে ধস্তাধস্তি হচ্ছে পিস্তল নিয়ে। তখন মান্না বলছিলো মুরতজা তাকে গুলি করতে চেয়েছে। আর মুরতজা পিস্তলটি তার লাইসেন্সকৃত বলে চিৎকার করে বলছিলো। এর মধ্যে এক যুবক এসে পিস্তলটি নিয়ে যায়।

২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, মুরতজা আবেদীনের উপর হামলা পরিকল্পিত। কেননা মুরতজা নিজ বাসা থেকে বের হওয়ার পরপরই মান্না ও তার অনুসারীরা মুরতজার পিছু নিয়েছিলো। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।

ঘটনার সময়ে উপস্থিত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর শফিক আহমেদ বলেন, ভূমি অফিস থেকে অস্ত্র হাতে মুরতজাসহ দুইজনে দৌড়ে এসে একটি হলুদ অটোতে মধ্যে ঢুকে পরেন। এসময়ে কিছু লোকজন অস্ত্রসহ মুরতজাকে ধরে পুলিশকে খবর দেয়।

জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক ও ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মুরতজা আবেদীন বলেন, আমার উপর হামলা হতে পারে সেটা আমি আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। কেননা বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকেই আমাকে ফলো করছিলো ওরা। ভূমি অফিস থেকে বের হওয়ার পর পরই আমার উপর হামলা চালায় মান্নার লোকজন। এসময় আমার কাছে থাকা লাইসেন্সকৃত পিস্তল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে মান্না।

বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রইজ আহম্মেদ মান্না জানান, আমি পারিবারিক জমি সংক্রান্ত কাজে সহকারী কমিশনার ভূমি অফিসে যাই। কাজ শেষে বেরিয়ে গেটে আসা মাত্র অফিস থেকে বেরিয়ে মুরতজা আবেদিন আমাকে গালি গালাজ করে। এর প্রতিবাদ করলে হঠাৎ পিস্তল বের করে গুলি করতে উদ্যত হয়। এই সময়ে আমার ডাক চিৎকারে স্থানীয় জনগন এগিয়ে এসে তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে।

কাউন্সিলর মুরতজা আবেদীনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর তার উপর পুনরায় হামলা চালায় মান্নার অনুসারীরা। এই নিয়ে পুলিশের এসআই রাকিবের সাথে বেশ উচ্চ বাচ্চ হয় মান্না ও তার অনুসারীদের।

স্টিমার ঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা পৌছানোর আগেই কাউন্সিলরের উপর হামলা করা হয়। পরে আমরা তাকে হেফাজতে নেয়ার পরও উত্তেজনা থামেনি।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. হামিদুল আলম বলেন, অস্ত্রটি আমাদের হেফাজতে রয়েছে, তাছাড়া কাউন্সিলর সাহেবও থানায় রয়েছেন। আমরা বিষয়টা দেখছি। আশে পাশের সিসিটিভি ফুটেজও পরীক্ষা করে দেখা হবে।

প্রসঙ্গত, বিসিসি নির্বাচনে মুরতজা আবেদীনের অভিযোগের কারনে ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রার্থীতা হারান রইজ আহম্মেদ মান্না। এসময় মান্নার বড় ভাই মুন্না কাউন্সিলর প্রার্থী হয় এবং তার কাছে নির্বাচনে মুরতজা আবেদীন হেরে যায়। কাউন্সিলর নির্বাচন নিয়ে এই দুই রাজনৈতিক নেতার সমর্থকদের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। নৌকার কর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় রইজ আহম্মেদ মান্না গ্রেফতারও হয়।