বরিশালটুডে ডেস্ক: বরিশাল নগরীতে বিভিন্ন দাবিতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক-মালিক ও শ্রমিকদের বিক্ষোভ মিছিলে ঢুকে পড়ায় এক মোটরসাইকেল আরেহীকে মারধর করা হয়েছে। ওই আরোহীকে রক্ষা করতে এগিয়ে যাওয়া ট্রাফিক সার্জেন্টকেও মারধরের অভিযোগ উঠেছে মিছিলকারীদের বিরুদ্ধে।
শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে বরিশাল নগরীর ফজলুল হক এভিনিউ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় অটোরিকশার চালক, মালিক ও শ্রমিকরা থ্রি-হুইলারসহ বিভিন্ন যানবাহনে ভাঙচুর করেছে। বরিশাল নগরীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া বন্ধ করা, মামলার জরিমানা অনধিক ৫০০ টাকা করা, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পার্কিং স্ট্যান্ড নির্মাণ, খুলনা সিটি করপোরেশনে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উচ্ছেদ বন্ধ ও ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যান ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ ও রিকশাভ্যান চালক শ্রমিক পরিষদ এবং সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের যৌথ উদ্যোগে নগরীর অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে সমাবেশ করে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগ্রাম পরিষদের বরিশাল জেলার সভাপতি দুলাল মল্লিক।
বক্তব্য রাখেন সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সমন্বয়কারী ডা. মনীষা চক্রবর্তী, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন খোকন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বরিশাল জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, সংগ্রাম পরিষদের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড শাখার সভাপতি শহিদুল শেখ, ৩ নম্বর ওয়ার্ড শাখার সভাপতি মনির সর্দার প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর ফজলুল হক এভিনিউ সড়কের নগর ভবনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ডা. মনীষা চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বেশ শান্তিপূর্ণ ভাবেই শ্রমিকরা ফজলুল হক এভিনিউতে প্রবেশ করে। এসময় একজন মোটরসাইকেল নিয়ে মিছিলের পাশ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন শ্রমিকরা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মিছিলকারীরা ওই ব্যক্তিকে বেদম মারধর করে ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।
বিষয়টি দেখতে পেয়ে মোটরসাইকেল আরোহীকে রক্ষা করতে ছুটে যায় ট্রাফিক সার্জেন্ট শহীদুল ইসলাম। মিছিলকারীরা তাকেও মারধর করে। এরপর ব্যাটারিচালিত যানবাহনের চালকদের একটা অংশ নগরভবনের সামনে ট্রাফিক সিগনালে আটকে থাকা সিএনজি, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। তারা একটি সিএনজি উল্টো করে ফেলে দেওয়ায় নারী-শিশু আহত হয়। আহত মোটরসাইকেল চালককে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
আহত মোটরসাইকেল চালক আব্দুল্লাহ আল মেহেদী বলেন, ‘মোটরসাইকেলের কাগজপত্র সঙ্গে ছিল না। ট্রাফিক সার্জেন্টকে দেখে তাকে এড়িয়ে যেতে মিছিলের পাশ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। তখন শ্রমিকদের ধাক্কায় মোটরসাইকেলসহ পড়ে যাই। এরপর শ্রমিকদের একটা অংশ আমাকে বেধরকভাবে মারধর করেছে। তারা কিল-ঘুষি, লাথি দেওয়াসহ লাঠিপেটা করেছে। তখন ট্রাফিক সার্জেন্ট শহীদুল স্যার এগিয়ে এলে তাকেও পিটিয়েছে শ্রমিকরা।’
হামলায় আহত সার্জেন্ট শহিদুল ইসলাম বলেন, বাসদ জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা. মনিষা চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে একটি মোটরসাইকেল ওই স্থান দিয়ে যাচ্ছিল। যাওয়ার সময় আকস্মিক শ্রমিকরা তার ওপর হামলা চালায় ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। মোটরসাইকেল আরোহীকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে বিক্ষোভকারীরা আমার ওপরও চড়াও হয়। তারা আমাকেও বেদম মারধর করেছে।
তিনি আরও বলেন, এরপরই বিক্ষোকারীদের একটা অংশ নগর ভবনের সামনে ট্রাফিক সিগনালে আটকে থাকা থ্রিহুইলার, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এ সময় থ্রিহুইলার উল্টো করে ফেলে দেওয়ায় নারী-শিশুসহ ৪ থেকে ৫ যাত্রী আহত হয়। পরবর্তীতে কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ডা. মনিষা চক্রবর্তী বলেন, একটি মোটরসাইকেল বিক্ষোভ মিছিলে প্রবেশের পর কে বা কারা হামলা চালায়। এছাড়া বেশ কয়েকটি যানবাহনও ভাঙচুর করা হয়। এর সঙ্গে বিক্ষোভরতদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন তিনি।
ঘটনাস্থলে থাকা বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার ফজলুল করিম বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ যানবাহনের চালক ও মালিকরা মামলা করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সার্জেন্টের ওপর হামলার বিষয়টি তদন্তে সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।