বরিশাল ডিসি ঘাট দখলে মরিয়া চিহ্নিত অপরাধীরা


রবিউল ইসলাম রবি ॥ বৈধ ও অবৈধভাবে বরিশালে স্পীড বোট ঘাট দখল নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা শুরু হয়েছে। ২৬ এপ্রিল শুক্রবার জুম্মা নামাজের পূর্বে নগরীর বান্দ রোড ভাটার খাল এলাকার কীর্তনখোলা নদীর তীর সংলগ্ন ডিসি ঘাটে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের রোষানলে স্পীড বোট ঘাট দখল করতে আসা গ্রুপটি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে সটকে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে ঘটনাস্থলে সাংবাদিক ও বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

স্থানীয় সূত্র জানা গেছে, বরিশাল জেলা স্পীড বোট মালিক ও শ্রমিক সমবায় সমিতি লিঃ নামে একটি রেজিস্ট্রেশনভুক্ত (নং ০৪১৮ বিডি) সংগঠন স্পীড বোট ঘাটটি পরিচালনা করে আসছে। কমিটির সভাপতি কালাম শরীফ ও এক সদস্যর মৃত্যুতে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ৩২ সদস্য তে রূপান্তরিত হয়। সংগঠনের সম্পাদক মোঃ অহিদুল আলম বলেন, দুই বছর পর পর নতুন করে কমিটি গঠন করা হয়। প্রায় দু’বছর পূর্বে সভাপতি মারা গেছেন। তারপর নতুন করে কমিটি গঠন করা হয়নি। বর্তমানে চলমান সমস্যা কি? তা জানতে চাইলে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমার চেয়ে লাইন সম্পাদক মোঃ তারেক শাহ্ ভালো বলতে পারবে।

তারেক শাহ্ বলেন, নতুন কমিটির বিষয় নিয়ে আমরা সাংগঠনিকভাবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) এর কাছে গেলে তিনি সংগঠনের ৩২ সদস্যদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী তারা উপদেষ্টা মন্ডলীর পদ খালি রেখে সভাপতি পদে মোঃ মিলন শেখ ও সম্পাদক পদে মোঃ অহিদুল আলম কেসহ ৩২ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটির তালিকা তৈরি করেন। তালিকাটি সাংগঠনিকভাবে কয়েক দিনের মধ্যে মেয়র বরাবর পেশ করার সিদ্ধান্ত নেন। হঠাৎ শুক্রবার জুম্মা নামাজের পূর্বে স্পীড বোট ঘাটটি দখল করতে যায় মো: আলমগীর খান আলো, মো: নজরুল ইসলাম, শেখর দাস, মোঃ কবির মুন্সী ও খোকনসহ প্রায় ২০/২২ জন। এমন সময় সাংবাদিক-পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে তারা মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। বহিরাগত ওই খোকন ও শেখর চাঁদাবাজী মামলায় অভিযুক্ত।

আলমগীর খান আলো হলেন, বরিশাল বিভাগীয় পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির সভাপতি, বরিশাল মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি পরিচালক ও বরিশাল ষ্টিমার ঘাট জামে মসজিদের সভাপতি। বিষয়টি জানতে তার মুঠোফোনে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। তার সাথে যাওয়া দু’জনকে রিং দিলে রিসিভ করেনি। এমন পরিস্থিতিতে ঘটনার কারণ অনুসন্ধানকালে বেড়িয়ে এসেছে ভিন্ন তথ্য। তাহল- শিরিন হত্যা মামলাসহ সমাজে নানা অপরাধে জড়িত থাকা আলমগীর খান আলো ১০ নং ওয়ার্ডের সব সেক্টর দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ষ্টিমার ঘাট স্টল মালিক সমিতিতে হস্তক্ষেপ, বরিশাল বহুমুখী সিটি মার্কেটের কাঁচা বাজারে চাঁদা দাবীসহ সম্প্রতি স্পীড বোট ঘাটে নতুন কমিটি গঠন করে সভাপতি পদে আসতে চান আলমগীর খান আলো।

প্রমাণ হিসেবে পাওয়া গেছে, ওই ৩২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির ৬ সদস্যসহ বাহিরের ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ২৪ সদস্য বিশিষ্ট অপর একটি কমিটির তালিকা থেকে। এ তালিকার মধ্যে উপদেষ্টা রয়েছেন ৩ জন। সংগঠনের নাম দেয়া হয়েছে বরিশাল জেলা স্পীড বোট মালিক সমিতি। যার রেজিঃ নং- ০৪২৮। এ কমিটির তালিকায় সভাপতি পদে রয়েছে আলমগীর খান আলো, সম্পাদক পদে নজরুল ইসলাম। আর দুই কমিটিতে যে ৬ সদস্যর নাম রয়েছে তারা হলেন, মো: মিলন শেখ, মো: মাসুদ শিকদার, মো: আ. মান্নান মৃধা চুন্নু, মো: কবির মুন্সী, মো: মনজু আকন ও মো: বাদল।

এরমধ্যে দুই সংগঠনের তালিকায় সভাপতি ও সহ-সভাপতি রয়েছে মিলন শেখ এর নাম। তিনি বলেন, শুরুতে ৩২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সকলে মিলে কমিটি গঠন করার কথা ছিল। হঠাৎ মাঝখানে আলো ভাই চলে আসলো। এখন কোনটা হবে কোনটা হবে না তা জানি না। তবে সংগঠনের নিয়মানুযায়ী বহিরাগতরা কমিটিতে আসতে পারবে না।

ঘটনাস্থলে নগরীর ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ জয়নাল আবেদীন হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, হৈ-হুল্লার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছি। এখন নামাজের সময় পরে কথা হবে।

সরেজমিনে যাওয়া কোতোয়ালি থানা পুলিশ জানিয়েছেন, দু’পক্ষের পুরো ঘটনা শুনে নিয়মানুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।