বরিশালটুডে ডেস্ক: নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে হামলার আগে বাটনা গ্রামে নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেয় বলে মন্তব্য প্রদান করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন রিপন। অপরদিকে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী পরিপূর্নভাবে বাদ হয়ে গিয়েছে তখনই কিন্তু সমস্যা শুরু হয়েছে। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আরেকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর ট্রাকের উপর ভর করেছে। তারপরে তারা মারমুখী হয়েছে বলে মন্তব্য প্রদান করেন নৌকা প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীম।
বরিশাল-৫ সদর আসনের আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মিদের উপর হামলা ও নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনার জন্য পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে দুই প্রার্থী।
শনিবার (৬ জানুয়ারী) বেলা ১২ টায় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেস ক্লাবে সতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন রিপন প্রথমে সংবাদ সম্মেলন কক্ষে বক্তব্যে তিনি বলেন, হুমকি-ধামকি ও বার বার বাধার পরও আমার কর্মীরা প্রচার-প্রচারণা থেকে সরে যায়নি। কর্মী ও সমর্থকরা ভালোবাসে বিধায় প্রচারণার শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত আমার সাথে আছে।
সর্বশেষ শুক্রবার রাতে বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের বাটনা গ্রামে আমার বাড়ির পাশের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে হামলার আগে বাটনা গ্রামে নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেয়। পরবর্তীতে জেলা পরিষদের সদস্য শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে সেই মিছিলে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিনসহ স্থানীয়রাও ছিল। আর ওই মিছিল থেকেই আমার প্রধান নির্বাচনী কার্যলয়ে হামলা চালানো হয়। তখন সেখানে যে নারী কর্মীরা ছিল, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলার খবরে স্থানীয়রা ছুটে আসলে হামলাকারীরা পলিয়ে যায় এবং তখন দুজন হামলাকারীকে ধরে পুলিশের হাতে তুুলে দেয়া হয়। তবে ঘটনার সময় আমি বরিশাল নগরীতে থাকায় বড় ধরণের হামলা থেকে বেঁচে গেছি। আর রাতের ওই ঘটনার পর আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের মাঝে ভীতি সঞ্চার হয়েছে। এ হামলার ঘটনা ছাড়াও সম্প্রতি মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাড. আফজাল হোসেন কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদককে হুমকি দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, নৌকার প্রার্থী ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভোটকেন্দ্র দখলপূর্বক নির্বাচনে জয়লাভের পরিকল্পনা করছেন। বরিশাল-৫ (সদর) আসনের ১৭৬টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী সালাহউদ্দিন রিপন।
অপরদিকে একই স্থানে বিকেল সাড়ে তিনটায় নৌকার প্রার্থী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামীম সংবাদ সম্মেলন করে।
এসময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। নির্বাচন সুন্দরভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলো। যেভাবে শান্তিপূর্ন এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো। এটা এ মাসের ২ তারিখ পর্যন্ত সুষ্ঠু ছিলো। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী পরিপূর্নভাবে বাদ হয়ে গিয়েছে তখনই কিন্তু সমস্যা শুরু হয়েছে। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আরেকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর ট্রাকের উপর ভর করেছে। তারপরে তারা মারমুখী হয়েছে। স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী প্রথম থেকে শালীনতা বজায় রেখে কিন্তু নির্বাচনী প্রচারনা করছিলেন। তাকে প্ররোচনা করা হয়েছে বিভিন্নভাবে, তাকে সামনে রেখে মারমুখী পদক্ষেপ গ্রহন করছে তারা।
শুক্রবার রাতে যে ঘটনা ঘটেছে, নৌকার কর্মীরা সাধারন ভাবে চরবাড়িয়া ক্রস করছিলো। শেষের দিকে দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিলো। তাদেরকে আটকে তাদের মোটর সাইকেল ভাংচুর করেছে। পরবর্তিতে পুলিশ ও র্যাব তাদের উদ্ধার করেছে।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শামীম বলেন, আমার কথা হলো নৌকার কর্মী যদি হামলা করতে যেতো। তাহলে প্রথম দিকে যারা ছিলো, তাদের তো আহত করার কথা ছিলো। তারা তো আহত হয়নি। এর মানে কি হলো তার নরমালই এসেছিলো, তাদের পিছনে হামলা হয়েছে। তারপরে তারা একটি নাটক সৃষ্টি করেছে। স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতীকের প্রার্থীর সিসি ক্যামেরা ছিলো, সেই ক্যামেরা ঘুরিয়ে দিয়েছিলো। এত সুবুুদ্ধি ট্রাকের প্রার্থীর কিন্তু নাই। এই সুবুুদ্ধি তাকে তারা দিয়েছে, যারা বরিশাল নগরীতে সন্ত্রাসী করেছে, চাঁদাবাজি করেছে। তারা এবং তার সঙ্গের সাঙ্গ-পাঙ্গরা। তাদের সুবুুদ্ধির কারনে এই কর্মকান্ড ঘটেছে। তিনি আরো বলেন, আপনারা গত পাঁচ বছর আমাকে দেখেছেন, কখনো কি কোনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে আমার সমর্থন করেছি। আমি প্রতিমন্ত্রী ছিলাম, কোন চাঁদাবাজি কিংবা কারো ঘরবাড়িতে হামলা করেছি। আমার সাথে ছিলো কোন ছেলে এসব কর্মকান্ডে জড়িত ছিলো। এখন আপনারা কিভাবে আশা করেন এখন নির্বাচনের সময় আমি কিভাবে এমন সব কর্মকান্ড করবো যা আমার এত বছরের অর্জন ও সুনাম ক্ষুন্ন করবো। গত ২৯ তারিখে প্রধানমন্ত্রী জনসভায় খোলামেলা আমারা প্রশংসা করেছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ জানিয়ে বলেন, উনি আমাকে মুল্যায়ন করেছেন। বরিশালবাসী আমাকে মুল্যায়ন করেছে। বরিশালের মানুষ আমাকে ভালো মানুষ হিসেবে জানে। গত ৫ বছরে আমি তো কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করেনি। এখন কেন নির্বাচনের সময় এ ধরনের কর্মকান্ড করবো। জাহিদ ফারুকের অভিযোগ, তাদের প্লান হলো বিভিন্ন কর্মকান্ড করা। আমার ক্যাম্পে যে আগুন লাগলো। আমার লোকজন তো করেনি। এ আগুন তারা লাগাচ্ছে আর বিএপিকে দোষারোপ করছে। এ আগুন তো বিএনপি দেয়নি। এ কাজ যারা করেছে তারা কিন্তু ট্রাকের উপর ভর করেছে, ট্রাকের উপদেষ্টা মন্ডলী যারা আছে তারা করেছে। তারা এটা বিএনপির নামে করছে। তারা বরিশালের মানুষের শান্তি-শৃংখলা বিঘ্নিত করার জন্য করছে। এটা বরিশালবাসীকে বুঝতে হবে। আমরা বরিশালবাসীকে শান্তিতে রাখতে চাই। নির্বাচনে জয়ী হলে এই বরিশাল হবে গর্বিত একটি শহর। সংবাদ সম্মেলনে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আফজালুল করিম, সাবেক দপ্তর সম্পাদক লস্কর নুরুল হক এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য বলরাম পোদ্দার উপস্থিত ছিলেন।
নৌকার প্রার্থীর অভিযোগ সম্পর্কে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ঘনিষ্টজন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা কোন পক্ষের জন্য ভোট চাইনি। আমরা কেন্দ্রের নিদের্শনা অনুযায়ী সাধারন ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসার আহবান জানিয়েছি। সবাই যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে সকলের প্রতি সেই আহবান জানিয়েছি। তিনি আরো বলেন, সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ প্রার্থী হয়েছিলেন। তার প্রার্থীতা বাতিল হওয়ার পর বরিশালে এসে দুইদিন অপেক্ষা করেছেন। আমাদের অভিভাবক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ যদি বলতো, তাহলে আমরা নৌকার প্রচার-প্রচারনায় যেতাম। কিন্তু তিনি বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ উপেক্ষা করে নির্বাচন করছেন। আমার ধারনা উনি নৌকার প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগ নন। কারন আওয়ামী লীগ হলে তো সবাইকে ডাকতেন।
পাল্টা অভিযোগ করে অ্যাড. জাহাঙ্গীর বলেন, তিনিও তো সন্ত্রাসী কর্মকান্ড উস্কে দিচ্ছেন। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন কেউ যদি একটা মারে তাহলে ১০ টা দিতে। আমরা কোথায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করেছি।