বরিশালটুডে ডেস্ক: স্বামীর সাথে সংসার করতে চাই। বিয়ে হবার তিন সপ্তাহ পরই স্বামীকে পাগল সাজিয়ে দূরে রাখতে চায় তার যুগ্ম সচিবসহ পরিবারের সদস্যরা। এমন অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ফাতেমা তুজ জোহরা (৩০)। তিনি বরিশাল নগরীর বগুড়া রোড কবি জীবনান্দ দাস সড়ক এলাকার বাসিন্দা। রোববার (১৫ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১২টায় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ) বীর মুক্তিযোদ্ধা-শহীদ জননী সাহান আরা বেগম স্মৃতি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ‘পবিত্র ঈদুল ফিতর’ এর সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঝালকাঠির নিউ কলেজ রোড (মানপাশা মঞ্জিল) এলাকার মৃত. মোসলেম আলীর ছেলের সাথে আমার পরিচয় হয়। একপর্যায় আমাদের মধ্য সু-সম্পর্ক হয়ে উঠে। এবং ২০২৩ সালের ‘পবিত্র ইদুল আযহা’ এর ৩য় দিন সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক সপ্তাহ পূর্বে সামাজিকভাবে আমাকে দেখতে আসেন, আমার স্বামীর মেঝো ভাই মো: মিজানুর রহমান টিটুর স্ত্রী মোসা: রিজিয়া রহমান ওরফে রুনাসহ ৫ জন। তারা আমাকে দেখে পছন্দ করে। হঠাৎ গত ০২/০৭/২৩ইং তারিখে রিজিয়া রহমান আমাকে মুঠোফোনে কল দিয়ে বরিশাল আসেন। পবিত্র ইদুল ফিতর এর ৩য় দিন তাই ঘুরাঘুরির কথা বলে আমাকে ঝালকাঠি নিয়ে যায়। আমাকে কিছু না বলে হঠাৎ দুপুর বেলা তাদের বাসায় নিয়ে যায়। খাবারের পর রিজিয়া রহমান ওরফে রুনা ও তার বোনের স্বামী এ্যাড. মো: মোরশেদ কামাল বলেন, মেয়ে (আমাকে) আমাদের পছন্দ হয়েছে। দেরি করে লাভ কি? এ কথা বলে ওই দিন বিকেলেই তাদের বসতঘরে কাজী এনে বিয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। বিয়েতে আমার পক্ষে স্বাক্ষর নেয়া হয় কাজীর সাথে আসা মো: মিলন সরদার নামের এক ব্যক্তির। আমার আত্মীয়-স্বজনকে জানানো তো দূরের কথা আমার মাকে তাদের বসতঘরে পর্যন্ত আসার সময় দেয়নি তারা। বিয়ের পর আমি স্বামীর ঘরেই অবস্থান নেই।
কিন্ত বিয়ের দুই দিন পর আমার স্বামী আমাকে বলেন, আমাদের বিয়ে ইসলাম শরীয়ত মোতাবেক হয়নি। কারণ, নিকাহনামায় তোমার অভিভাবক কারো স্বাক্ষর নেই। এরপর থেকেই আমার স্বামী ইচ্ছাকৃতভাবে উল্টাপাল্টা কার্যক্রম শুরু করে। হঠাৎ স্বামীর সংসারে বসে আমি গত ১৯/০৭/২৩ইং তারিখ রাতে অসুস্থ হলে পরদিন ২০ তারিখ সকালে আমাকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্যালাইন দেয়া শেষে ২০ তারিখ বিকেলে স্বামী আমাকে নিয়ে বরিশালে আমার মায়ের বসতঘরে চলে আসে। পরদিন ২১ তারিখ সকালে আমার স্বামী আমাকে জানায়, আমার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী আফরোজা খানম ওরফে পপি তোমাকে ও আমাকেসহ তোমার মাকে আসামী করে মামলা দিয়েছে। তুমি তোমার মায়ের কাছে থাকো। আমি গিয়ে নয়ন আপুসহ পরিবারের সকলের সাথে আলোচনা করি। কি করা যায়? তুমি ততোদিন তোমার মায়ের কাছে থাকো। তখন আমি স্বামীকে বলি, কোন অসুবিধা হলে তুমি আমাকে জানাবে এবং আমার কাছে চলে আসবে। কিন্তু আমার স্বামী চলে যাবার দুই দিন পরই আমাকে জানায়, তোকে তালাক দিয়েছি। তোর সাথে সংসার করবো না। অথচ এখন পর্যন্ত আমি তালাকের কোন কপি হাতে পাইনি। তবে এক মাস পর আমার স্বামী আমার হেয়াসঅ্যাপে তালাকনামার একটি ছবি পাঠায়। ছবিটি দেখে ঝালকাঠি নিউ কলেজ মোড় কাজী অফিসে যাবার পর সেই কাজী জানায়, ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে। অথচ আমি হাতে পাইনি। পরে বিষয়গুলো আমার বিয়েতে স্বাক্ষী থাকা আমার সেই ভাবি রিজিয়া রহমান ওরফে রুনাকেসহ তার বোনের স্বামী এ্যাড. মো: মোরশেদ কামালকে জানালে তারা বলেন, এ বিষয় আমরা কিছু জানি না। তোমার যা ভালো লাগে তাই করো। বিয়ে করছো তোমরা, সংসার করবা তোমরা, তোমার স্বামীতো দেশে নেই, কানাডা চলে গেছে।
তাদের প্রশ্নের উত্তরে আমি বলি, নিকাহনামায় আমি কোন তথ্য গোপন করিনি। এমনকি ৫ নম্বরের তথ্যও সঠিক দিয়েছি। কিন্তু আমার স্বামীর নিকাহনামার ২১ নম্বর তথ্য ভুল দিয়েছেন। আপনারা দুই ভাই-বোন আমার জীবন শেষ করে দিলেন? এরপর থেকে আমার স্বামীসহ তার পরিবারের সকল সদস্যরা মোবাইল নম্বারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আমাকে ব্লক করে দেয়।
উপায়ন্ত না পেয়ে আমি ‘আমার স্বামীর সংসার চাই’ এই মর্মে মীমাংসার জন্য বরিশাল মহিলা অধিদপ্তরে ৪ জনের নামে একটি লিখিত আবেদন করি। যা এখনও চলমান রয়েছে। পরে আমি বরিশাল মহিলা অধিদপ্তর থেকে জানতে পারি, সাংবাদিক পরিচয়ে এক ব্যক্তি আমার স্বামীর পক্ষ হয়ে বলে গেছেন সে (আমার স্বামী) পাগল। এমনকি পাগলের সার্টিফিকেট রয়েছে। আমার স্বামীর বোন হল, মোসলেমা নাজনীন, তিনি একজন যুগ্ম সচিব, অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (অফিস শাখা: ইউরোপ-২, রুম#১৮, ব্লক#০৬) কর্মরত রয়েছেন। তার ক্ষমতার প্রভাব বিস্তারে আমার সুস্থ স্বামীর নামে অবৈধপন্থায় পাগল রুপে নাটক সাজানো হয়েছে। যা পরিকল্পিত। প্রথম পরিচয় থেকে এ পর্যন্ত আমার স্বামীর মধ্যে কোন পাগলের আচরণ পাইনি।
তাছাড়া ‘পাগলের সাথে প্রেম করে সেই পালগকে কেউ বিয়ে করে?’ আমার স্বামী বলছিল, তার স্ত্রীর সাথে ডিভোর্স হয়ে গেছে। সেই ডিভোর্স এর কাগজপত্র আমাকে দেখিয়েছে এবং আমি যে তালাকপ্রাপ্ত তা জেনে শুনেই দুই জনের মধ্য সু-সম্পর্কের পর বিয়ে হয়েছিল। সত্যিই যদি সে পাগল হয় তাহলে তার পরিবারের সদস্যরা আমাকে পছন্দ করে কিভাবে বিয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন করল? আসলে আমার স্বামী পাগল না। তাকে পাগল সাজিয়েছে তার বোন মোসলেমা নাজনীন ওরফে নয়নসহ তার পরিবারের সদস্যরা।