বরিশালটুডে ডেস্ক: ইতিমধ্যেই রেললাইন বসানোর কাজ শেষ। প্রকল্পের ভবনগুলোর নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে প্রায় ৯৫ ভাগ। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে দুইদেশের প্রধানমন্ত্রী রেলপথটির উদ্বোধন করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন প্রকল্প সংশিষ্টরা।
চলতি আগস্ট মাসের শেষ দিকে পরীক্ষামূলকভাবে আখাউড়া থেকে আগরতলায় ট্রেন চলানোরও প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তারা।
এ অবস্থায় রেলপথকে ঘিরে বন্ধুত্বপূর্ন দুই দেশের বাসিন্দাদের মধ্যে আগ্রহের শেষ নেই। সংশ্লিষ্টরা জানান, রেলপথটি চালু হলে ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়নের পাশাপাশি সম্পর্কের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও নব-দিগন্তের সূচনা হবে।
সড়ক পথের পর এবার আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ দিয়েও দু’দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হবে। রেলপথে পণ্য পরিবহন খরচ কম হওয়ায় আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য আরো চাঙা হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
চলতি আগষ্ট মাসের শেষ দিকে বহুল কাঙ্খিত এই রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের প্রস্ততি নিচ্ছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে ভারতের আগরতলার নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
রেলপথটির ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশ অংশে। প্রকল্পের কাজটি বাস্তবায়ন করছে ভারতের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। প্রকল্পের বাংলাদেশ অংশের সাড়ে ৬ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২৪১ কোটি টাকা।
দেড় বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারীসহ নানা সংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে কয়েক দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত জুন মাসে। এই রেলপথটি উত্তর-পূর্ব ভারতের সাথে সরাসরি যুক্ত করবে বাংলাদেশকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্পের বাংলাদেশ অংশের রেলপথে রেললাইন বসানোর কাজ শেষ। এছাড়াও প্রকল্পের ১৬টি সেতু ও কালভার্টের সবকটিরই কাজ শেষ হয়েছে ইতোমধ্যে। আর ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৯৫ ভাগ।
আখাউড়া-আগরতলা রেলপথটি চালু হলে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য আরো বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
আখাউড়া স্থলবন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আমদানি খরচ বাড়াসহ নানা কারণে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে এখন ভারত থেকে পণ্য আমদানি হচ্ছে না। এছাড়া একই কারনে ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিচ্ছেন কম। তবে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথটি চালু হলে সড়কপথের তুলনায় কম খরচে পণ্য পরিবহন করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। এতে দু’দেশের ব্যবসায়ীরাই লাভবান হবেন।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আজিজুল হক বলেন, রেলপথে পণ্য পরিবহন অনেক বেশি নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী। আখাউড়া-আগরতলা রেলপথটি চালু হলে দুইদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বিস্তৃত হবে বলে আশা করছি। এতে আমদানি খরচ কম হবে, ভোক্তা পর্যায়ে কম মূল্যে পণ্য পৌঁছে দেয়া যাবে। ফলে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এই রেলপথটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখবে।
এ ব্যাপারে প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ভাস্কর বকশি বলেন, প্রকল্পের ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ ৯৫ ভাগ শেষ হয়েছে। রেললাইন বসানোর কাজ শেষ। পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলে কোন সমস্যা হবে না। চলতি আগস্ট মাসের শেষ দিকে পরীক্ষামূলকভাবে আখাউড়া থেকে ট্রেন যাবে আগরতলায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক (বাংলাদেশ অংশ) মোঃ আবু জাফর মিয়া বলেন, পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে চলতি মাসেই এই রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল করানোর।
এরপর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দুইদেশের প্রধানমন্ত্রী রেলপথটির উদ্বোধন করবেন বলে আশা করছি। প্রথমে পন্যবাহী এবং পরবর্তীতে যাত্রীবাহি ট্রেন চলাচল করবে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথে।