স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা ৩২ নম্বরের পরে বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর বাড়িতে বুলডোজার দিয়ে সামনের অংশ, সীমানা প্রাচীর গুড়িয়ে দিয়েছে উত্তেজিত ছাত্র জনতা। পাশাপাশি কিছু আসবাবপত্র আগুন দিয়ে পুড়িয়েও দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (০৬ নভেম্বর) দিবাগত রাত ১২ টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত টানা এ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
প্রতক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত ১২ টার দিকে সেনাবাহিনীরি সদস্যরাও কালিবাড়ি রোডে আসেন। একইসময় ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে কালিবাড়ি রোডের সেরনিয়াবাত ভবনমুখী হন ছাত্র-জনতা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সড়কের দুইপাশ থেকেই প্রবেশে বাধা দেন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বাসভবনের ভেতর ঢুকে যান। এসময় তারা জনমানবহীন বাড়ির বিভিন্ন তলায় গিয়ে পড়ে থাকা ভাঙাচোরা কিছু আসবাবপত্র ও গ্লাস ভাঙচুর করে।
পরে শিক্ষার্থীরা বুলডোজার নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাতে বাধা প্রদানের চেষ্টা করে। তবে শিক্ষর্থীরা সেই বাধাও উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বাসভবনের সীমানা প্রাচীর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে বাসভবনের সামনের অংশ, গাড়ি গ্রেজ ও সেডের অংশবিশেষ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। যদিও এর আগে বাসভবনের দ্বিতীয় তলা ও ছাদে অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয়, তবে শিক্ষার্থীরা তা অল্প সময়ের ব্যবধানে নিভিয়ে ফেললে ঘণ্টাব্যাপী ভাঙচুর কার্যক্রম চালানো হয়। এতে শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয় জনতাও অংশগ্রহণ করে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশের মানুষ বর্তমানে সুখে শান্তিতে বসবাস করছে। তবে দেশের বাহিরে থেকে খুনি,ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসররা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। দেশের ভেতরে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার পাঁয়তারা করছে। তারা মনে করেছে ছাত্র-জনতা ঘুমিয়ে গেছে। তাই আজ দেশ থেকে ফ্যাসিস্টদের মূল উৎপাটনে জনগণের টাকায় বানানো তাদের বাড়িঘরে আজকের এ প্রোগ্রাম।
শিক্ষার্থীরা বলেন, কালিবাড়ি রোডে সাদিকের বাড়িটি ছিল টর্চারসেল। মানুষকে এখানে ধরে এনে নির্যাতন করা হতো। তাই জনগণের ক্ষোভ এতটাই ছিল যে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে পুলিশ-সেনাবাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। আজ যা হচ্ছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মানুষের কঠোর অবস্থানের প্রতিফলন।
এদিকে কালিবাড়ি রোডের সেরনিয়াবত ভবন ভাঙচুরের পর রাত দেড়টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা নগরের বগুরা রোডস্থ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর বাসভবনেও ভাঙচুর চালায়। সেখানে একটি টিনের ঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়াড় পাশাপাশি টিনের ঘর লাগোয়া একতলা ভবনের সামনের অংশ এবং পাশের দোতলা ভবনের সামনের অংশ ভাঙা হয়। পরে উঠানের সীমানা প্রাচীর ও বাড়ির সামনের সীমানা প্রাচীর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বুলডোজার দিয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুলডোজার দিয়ে আমির হোসেন আমুর বাসভবনের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশের পরপরই ঘরগুলোতে ভাঙচুর চালানো হয়। পাশাপাশি ভেতরে থাকা বিভিন্ন মালামাল বাড়ির সামনে জড়ো করে তাতে আগুন দিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া কিছু মানুষ ওই সময় বিভিন্ন মালামাল লুট করতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তাতে বাধা দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, এই বাড়িতে বসে আমির হোসেন আমু বরিশাল ও ঝালকাঠিতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির কলকাঠি নারতো। যার আলামত হিসেবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পাওয়া গেছে।
ঘটনাস্থলে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম শাহেদ সাংবাদিকদের বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতা ফ্যাসিবাদের দোসরদের আস্তানা ভেঙে দিচ্ছে। তবে এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য দিতে কেউ রাজি হননি। এমনকি আমির হোসেন আমুর বাড়ির আশপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো পোশাকধারী সদস্যকে দেখাও যায়নি।