স্টাফ রির্পোটার: বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার উন্নয়নের দোহাই দিয়ে দেশের মানুষের সব নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। মানুষ আজ ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা এখন স্বাধীনভাবে, নির্ভয়ে কথা বলতে পারছে না। হামলা-মামলার ভয়ে সরকারের অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। এমনকি নিজের ভোটটি পর্যন্ত এখন নিজে দিতে পারছে না। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব আজ সংকটাপন্ন।
বৃহস্পতিবার (০৫ অক্টোবর ২০২৩) বিকেলে, বরিশাল অশ্বিণী কুমার টাউন হল সংলগ্ন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বরিশাল জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, এরা দেশ প্রেমিক নয়, এরা ক্ষমতা প্রেমিক। সরকারের দুর্নীতিবাজ লুটেরা এবং তাবেদার শক্তির কাছে দেশের মানুষ আজ জিম্মি। উন্নয়নের নামে দেশে এখন দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসব চলছে। সরকার তার দুঃশাসনকে দীর্ঘ করার জন্য, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অত্যান্ত নির্লজ্জভাবে পার্শ্ববর্তী দেশটির মনোরঞ্জন করে যাচ্ছে এবং দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে একের পর এক তাদের নীল নকশা বাস্তবায়ন করছে।
বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ দেশকে নরকে পরিণত করেছে। কোথাও শান্তি নেই, স্বস্থি নেই, নিরাপত্তা নেই। গুম-খুনের আতংকে মানুষ উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। জনগণের ওপর জুলুম নির্যাতন চললেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না, কোনো বিচার হয় না। প্রশাসনের সর্বত্র এখন একচ্ছত্র দলীয়করণ ও জুলুমবাজি চলছে।
চাল,ডাল,আলু, পিঁয়াজ ও চিনিসহ নিত্যপ্রয়োাজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। গোটা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে পণ্যের দাম সবচেয়ে বেশি। সবকিছুর দাম কমার পরিবর্তে ক্রমেই বাড়ছে। দলীয় সিন্ডিকেটের হাতে গোটা দেশ ও দেশের মানুষ আজ জিম্মি। মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ অথবা দলীয় লুটেরাদের সুবিধা দিতে ইচ্ছে করেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে না। সাধারণ মানুষ এখন দিশেহারা।
কাদের সাহেব যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে আমাদের বাংলাদেশ আমাদের দেশ থাকে না । আজ বাংলাদেশের মধ্যে যে অরাজগতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং দিন আর দিন দেশের সম্পদ নষ্ট হচ্ছে তার দায়দায়ীত্ব সরকারকে নিতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকার সরকার যখন বিরধী দলে ছিলো , তখন তারা তত্বাবধায়ক নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য পোনে দুইশ বারের মত হরতাল, অবরধ, বিভিন্ন পোগ্রাম দিয়ে হাজার মানুষ বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
এখন তারা তত্বাবধায়ক সরকার কি জানেওনা, চিনেওনা , বুঝেওনা। জাতীয় সরকারের কাজ হল বাংলাদেশের নিবন্ধীত জাতীয় দলগুলো নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন হবে এবং তাদের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশে হবে। যেহেতু জাতীয় নির্বাচনে দেশের সকদ রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা থাকায় কোন দলের কারো কোন ভিযোগ করবার, সমালচনা করবার সুযোগ থাকেনা । আজ আমরা লক্ষ করছি স্বাধীনতার সময় মা-বাবা-সন্তান-ভাই হারিয়ে বিধবা-এতিম হয়েছে।
এমতাবস্থায় গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে, জুলুম-নিষ্পেষণের কবল থেকে দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে, মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে আওয়ামী দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে হবে এবং সে লক্ষ্যে দেশের সকল শান্তিকামী, মুক্তিকামী নির্যাতিত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
এসময়ে সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, শায়খে চরমোনাই।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। সত্যিকারের স্বাধীনতা, দেশের সার্বভৌমত্ব ভুলুন্ঠিত হবে। মানুষের মৌলিক অধিকার নিঃচিহ্ন হয়ে যাবে জেল-জুলুম-হুলিয়ায় মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠবে। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। সুতরাং আগামীতে দেশের মধ্যে অনিবার্য সংঘাত এড়াতে সরকারকে দ্রুত পদত্যাগের ঘোষণা দিতে হবে। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী সরকারের অধীনে হবে না, হতে দেয়া হবে না, ইনশাআল্লাহ।
এসময়ে আরও উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, কেন্দ্রীয় ছাত্র যুব বিষয়ক সম্পাদক ও বরিশাল জেলা সভাপতি মাওলানা মুফতী সৈয়দ এছহাক, মুহাম্মাদ আবুল খায়রের সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনায় ছিলেন বরিশাল জেলা সেক্রেটারি উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব, কেন্দ্রীয় মহিলা ও পরিবার কল্যাণ সম্পাদক ও ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্র্রীয় সভাপতি আলহাজ্ব মাওলানা মুহাম্মদ নেছার উদ্দিন এবং ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ শরিফুল ইসলাম রিয়াদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বক্তাগণ এসময়ে সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ( চজ) পদ্ধতির প্রবর্তন, অথর্ব প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ ও ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন বাতিল এবং বিদ্যুৎ,গ্যাসসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতি রোধ করে জনদুর্ভোগ লাঘবের দাবীতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বরিশাল জেলা শাখা এ সমাবেশের আয়োজন করে। জেলা শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল, উপজেলা ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ আরো অনেকে ধারাবাহিক ভাবে সরকারের নানা ব্যর্থতার দিক তুলে ধরে এ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।