বরিশালটুডে ডেস্ক: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউজের গুদামে থাকা লকার থেকে ৫৫ কেজির বেশি সোনা চুরির ঘটনায় দায়ের করা মামলা অধিকতর তদন্তের স্বার্থে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ(ডিএমপি)।
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিমানবন্দর থানায় দায়ের হওয়া ৫৫ কেজি সোনা গায়েবের মামলাটি গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আজ বা কালকের মধ্যে মামলার তদন্ত ভার হস্তান্তর করা হবে।
এর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, বিমানবন্দর কাস্টমসের গুদাম থেকে সোনা গায়েবের বিষয়টি গোয়েন্দা পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে ছায়া তদন্ত করছে। একাধিক টিম কাজ করছে। কারা কারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সোনা চুরির এই ঘটনা ঢাকা শুল্ক বিভাগের নজরে আসে গত শনিবার (২ সেপ্টেম্বর)। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় পরদিন রোববার। বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসের নিজস্ব গুদামে দিনভর ইনভেন্টরি শেষে ৫৫ কেজি সোনা চুরি বা বেহাত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এঘটনায় চার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়ী করে মামলার কথা জানালেও মামলা হয়েছে অজ্ঞাতদের আসামি করে। পুরো ঘটনা তদন্তের জন্য কাস্টমসের যুগ্ম-কমিশনার মিনহাজ উদ্দীনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে কাস্টমস হাউজ।
রোববার (২ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা শুল্ক বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন।
মামলার কপি সংগ্রহের পর জানা যায়, মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের। শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টা থেকে পরদিন রোববার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে কে বা কারা গুদামের আলমারি লকার ভেঙে সোনাগুলো নিয়ে যান বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। শুল্ক বিভাগ বলছে, চুরি হওয়া এই সোনার মূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার দিকে ঢাকা শুল্ক বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মাসুদ রানা যুগ্ম কমিশনারকে বিমানবন্দরের ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ শাখার কাছে শুল্ক বিভাগের গুদামের মূল্যবান পণ্য সামগ্রী রাখার একটি স্টিলের আলমারির লক ভাঙা বলে জানান।
তিনি যুগ্ম কমিশনারকে আরও জানান, প্রতিদিনের মতো আটক পণ্য গুদামে রেখে তিনিসহ চারজন রাত সাড়ে ১২টার দিকে শুল্ক বিভাগ ছেড়ে চলে যান। গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এমন সংবাদ পেয়ে ওই গুদাম পরিদর্শনে যান ঢাকা শুল্ক বিভাগের কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার ও যুগ্ম কমিশনার এবং তিনি সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি কাস্টমস হাউস, ঢাকায় কর্মরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। গোডাউন পরিদর্শনে গিয়ে ভেতরে একটি স্টিলের আলমারির লকার ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান এবং গোডাউনের পূর্বপাশের ওপরের দিকে এসির বাতাস বের হওয়ার টিনের কিছু অংশ কাটা দেখতে পান এবং একইসঙ্গে তিনি গোডাউনে কর্মরত এ, বি, সি ও ডি শিফটের কর্মকর্তা মাসুম রানা, সাইদুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম ও আকরাম শেখ (সবাই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা) এবং রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন ও নিয়ামত হাওলাদার নামে চার সিপাইকে আলমারির লক ভাঙার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে কেউ কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি।
মামলার এজাহারে উল্লেখিত তথ্য মতে, গুদামের দায়িত্ব কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কোনো সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে শুল্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গুদাম থেকে কোনো মূল্যবান বস্তু চুরি হয়েছে কি-না, তা নিশ্চিত হতে গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশনা দেন। পরে দিনভর গুদামের দায়িত্ব কর্মকর্তারা আটকের রসিদ (ডিএম) মোতাবেক দেখতে পান ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে আটককৃত ৫৫ কেজি ৫১ গ্রাম সোনা চুরি হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোর্শেদ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিমানবন্দর রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই)। বিমানবন্দরের ভেতরের সব জায়গা সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারিসহ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়। অথচ কাস্টমসের গুদামে সিসিটিভি না থাকাটা বড় প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। স্বর্ণ চুরির আলামত নেই বললেই চলে। একটি বিষয় পরিষ্কার, কাস্টম হাউসের নিজস্ব গুদামে যার-তার প্রবেশের সুযোগ নেই। সুতরাং বাইরের কেউ এসে গুদাম থেকে স্বর্ণ নিয়ে যেতে পারবেন না। আর বাইরের কেউ চুরি করতে আসলে তো সবই নিয়ে যাবার কথা। একটি-দুটি করে তো নেবার কথা না। কাস্টমসের তথ্যমতে, ডিএম থেকে ‘আংশিক স্বর্ণ চুরি’ হয়েছে। প্রশ্নটা তাই এখানেই, চোর বাইরের নাকি ভেতরের কেউ।