স্টাফ রিপোর্টার: মঙ্গলবার ( ১০ অক্টবর ২০৩) জাতীয় তামাক মুক্ত দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এবং সততা ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি বরিশাল প্রেসক্লাব সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সততা ডেভেলপম্টে সোসাইটি নিরর্বাহি পরিচালক রেহানা ইয়াসমিন সততা ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির অন্যান্য সদস্যসহ প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
এসময় সততা ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি নিরর্বাহি পরিচালক রেহানা ইয়াসমিন বলেন, আজ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অসংক্রামক রোগের চাপে বিপর্যস্ত। হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার এই তিন অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ তামাক ব্যবহার। দেশের তিন কোটির বেশি মানুষ তামাক ব্যবহার করে। আর এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে তামাক ত্যাগ করাতে সরকার নানা উদ্যোগে ব্যস্ত। অপরদিকে কোম্পানিগুলো আইনভঙ্গ করে নতুন ধূমপায়ী তৈরি এবং দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করতে নানা অপকৌশল অবলম্বন করছে। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর বাংলাদেশে ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায় এবং ১৫ লক্ষাধিক মানুষ তামাক ব্যবহার জনিত নানা জটিল রোগে ভুগছে। প্রতি বছর ৬১ হাজারের অধিক শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। এইসব অকাল মৃত্যু এবং জটিল রোগ ভুক্তভোগী পরিবারকে সম্পূর্ণ এলামেলো করে দেয়। দেশের অর্থনীতিতেও তা ভয়ংকর নেতিবাচক প্রভাব রাখে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি কর্তৃক পরিচালিত গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে তামাক ব্যবহার জনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয় এবং কর্মক্ষমতা হ্রাসের কারণে সরকারের বাৎসরিক ব্যয় হয় ৩০ হাজার কোটি টাকা।
তিনি আরও বলেন, বিগত ৫ বছরে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই ব্যয় যে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। মুদ্রিত মূল্যের থেকে ১০-৩৫ টাকা অধিক মূল্য আদায় করা হচ্ছে যা রাস্ট্রের আইনের লঙ্ঘন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, উল্লেখিত আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে তামাক কোম্পানিগুলো বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে ।
অন্যান্য বক্তা এসময় বলেন, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৩৫.৩% (৩ কোটি ৭৮ লক্ষ) মানুষ তামাকজাত দ্রব্য সেবন করে। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বাড়িতে ৪ কোটি ১০ লক্ষ এবং গণপরিবহন ও জনসমাগমস্থলে ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ মানুষ ক্ষতির শিকার হয়। “বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮(১) অনুচ্ছেদে “জনস্বাস্থ্যের উন্নতি রাষ্ট্রের প্রাথমিক দায়ীত্ব ” হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা ৩ (ক) তে এফসিটিসির বাস্তবায়ন জোরদার করার কথা বলা হয়েছে। সার্বিকভাবে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা ৩ অর্জনের জন্য বাংলাদেশেকে তামাকমুক্ত করা আবশ্যক। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এসডিজি অর্জনকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের ৭ম ও ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় তামাক নিয়ন্ত্রণকে যুক্ত করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনের উল্লেখযোগ্য সংশোধন ও সংযোজন হচ্ছে- পাবলিক প্লেস, পরিবহনের আওতা বৃদ্ধি ও এ সকল স্থানে সব ধরণের তামাকজাত দ্রব্য সেবন নিষিদ্ধ, জরিমানা বৃদ্ধি এবং এসব স্থানে আলাদাভাবে ‘ধূমপানের স্থান’ না রাখা। তামাক কোম্পানির ‘সিএসআর’ কর্মকান্ড নিষিদ্ধ। বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য দৃষ্টির আড়ালে রাখা। খোলা ও খুচরা এবং ভ্রাম্যমান তামাক বিক্রয় নিষিদ্ধ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্যের দোকান না রাখা। তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ে লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা। তামাক পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ৯০% করা। ই-সিগারেট বা ভেপিংয়ের আমদানি, উৎপাদন, বিক্রয়, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উল্লেখযোগ্য।
এসময় বক্তাগণ তামাক জাতদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ করেন যেন দ্রুততম সময়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনী চূড়ান্ত করা; তামাক কোম্পানির প্রভাব থেকে নীতি সুরক্ষার এফসিটিসি এর অনুচ্ছেদ ৫.৩ অনুসারে ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ গ্রহণ; “জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি’ দ্রুত চূড়ান্ত এবং দেশব্যাপী যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করা; টাস্কফোর্স কমিটিসমূহ সক্রিয় করা, কমিটির ত্রৈমাসিক সভা নিয়মিতকরণ, সভার সিদ্ধান্তসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা; আইন লঙ্ঘনের দায়ে তামাক কোম্পানি/প্রতিনিধিকে আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি জেল প্রদান আইন লঙ্ঘনকারী তামাক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা; তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন মনিটরিং কার্যক্রমের সাথে বেসরকারী সংস্থাগুলোকে সম্পৃক্ত করা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে একটি শক্তিশালী তামাক কর নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।