নগরীর ভাটারখাল কলোনিতে ভাঙচুর লুটপাট ও হামলা মামলায় এলাকা ছাড়া শত বাসিন্দা


রবিউল ইসলাম রবি ॥ তুচ্ছ বিষয়ের তর্ক-বিতর্ক এখন আ.লীগ-বিএনপি দ্বন্দ্বে রুপ নিয়েছে। দুই পক্ষের প্রায় অর্ধশত বসতঘর ভাঙচুরের পাশাপাশি মালামাল লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। উভয় পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয়েছে ১০ জন। এরমধ্যে ৭ জনকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। এক পক্ষের দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার হয়েছে ১ কিশোর সহ ৭ জন। অপর পক্ষ নিচ্ছে মামলার প্রস্তুতি। যে কারণে এলাকায় দুই পক্ষের টানটান উত্তেজনার মধ্যে বসতঘর ছেড়ে পালিয়েছে প্রায় শতাধিক বাসিন্দা। সোমবার (২৮ অক্টোবর) বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দফায় দফায় বরিশাল নগরীর ১০ নং ওয়ার্ড ভাটার খাল কলোনিতে থাকা একটি মটার নষ্ট হবার পর পানি ব্যবহারের তর্ক-বিতর্ক নিয়ে উপরোক্ত ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। তখন ঘটনাস্থলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৩টি পানি লাইনের মধ্যে ১টি বিসিসির ‘বিশুদ্ধ পানি সাপ্লাই’ অপর ২টি মটার দিয়ে পানি উত্তোলন করে ব্যবহার করা হয়। সম্প্রতি ১টি মটার নষ্ট হলেও হামলা-মামলার পূর্বে তা মেরামত করা হয়। এলাকার বাসিন্দারা ভাগে ভাগে এক এক স্থান থেকে প্রায় ৩শ পরিবার পানি ব্যবহার করত। নষ্ট হওয়া মটারটি যথাযথ সময় মেরামত না হওয়ার মধ্যে প্রায় শতাধিক পরিবার কলোনির অন্য স্থানের পানির উপর নির্ভর হয়। পানি নেয়া নিয়ে এলাকায় ক্ষমতার প্রভাব বিস্তারের তর্ক-বিতর্কের একপর্যায় দ্বন্দের সূত্রপাত ঘটে। শুরু হয় হামলা। যা পরে ঘটে বসতঘর ভাঙচুরের প্রতিযোগিতা। দুই পক্ষই একে অপরের বসতঘর ভাঙ্গা ও লুটপাটের জন্য দায়ী করছেন।

আহতদের মধ্যে তানিয়া আক্তার (৩০), বেবী বেগম (৫৫), মুন্নী (৩৮), সাফিন (১৭) হাসপতালে ভর্তি হয়েছে এবং জাহাঙ্গীর মাঝি (৫০) ও নাজমা বেগম (৫৩) প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। অপরপক্ষের কুলছুম বেগম (৩০), আনোয়ার (৬০) ও সগির (৩০) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং বাকি ১ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। আহতরা একে অপর পক্ষের দোষ বলে এবং বসতঘর ভাঙচুর এ লুটপাটের জন্য এক পক্ষ অপর পক্ষকে দায়ী করছে।

ঘটনার পরদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) এ হামলার ঘটনার অনুকূলে কলোনির বাসিন্দা মোঃ শাওন মোল্লার স্ত্রী তানিয়া আক্তার বাদী হয়ে নামধারী ১৪ জন সহ অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জনকে আসামী করে বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানায় দায়ের করেছে একটি মামলা। যার নং-৫০/৬৭৪। দায়েরকৃত মামলার আসামীরা হলেন- মাসুম (৩২), মোঃ সোহেল (৩৫), রুহুল আমীন (৪০), মোঃ কামাল (৩৫), আরিফ (২১), রনি (১৫), মোসা: আনিয়া (২০),পাখি (৩৬), আনজু (২৫), রুবিনা (২৫), কুলসুম (৪০), মুন্না (২৩), জনি (২২), ও সোহেল (৩৮) সহ অজ্ঞাতরা। আসামীদের বিরুদ্ধে “বে-আইনীভাবে একত্রিত হয়ে বসতঘরে প্রবেশ করে মারধর, ভাঙচুর ও চুরি সহ ক্ষতির অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়।” মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল ইসলাম আসামী কিশোর রনিকে সহ ৭ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বরিশাল মেট্রােপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী-২ আদালতের বিচারক মোঃ নূরুল আমিন আসামীদের জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। তারা হলেন- মোঃ সোহেল (৩৫), রুহুল আমীন (৪০), মোসা: আনিয়া (২০), পাখি (৩৬), আনজু (২৫), ও রুবিনা (২৫)। আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশুকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ প্রসঙ্গে কিশোর অপরাধীকে মামলা সুষ্ট তদন্তের স্বার্থে জেল হাজতে আটক রাখা প্রয়োজন বলে বিএমপির সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) শ্রাবন্তী বিশ্বাস আদালতে আবেদন করেন।

এজাহারে উল্লেখ রয়েছে,আসামীরা ঘটনার দিন বাদীর বসতঘরে ঢুকে মালামাল ভাংচুর করে। বাধা দিলে ১নং আসামী হাতে থাকা দা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে কোপ দিলে তা ডান হাতের কনুর উপরে লাগে। ২-১৪নং আসামী সহ অজ্ঞাতনামারা লাঠি দিয়া বাদীর বৃদ্ধা মাকে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে আহত করে করে। আসামীরা বসত ঘরের ফ্রিজ ৫৫ হাজার টাকা, ওয়াল শোকেজ ৪০ হাজার, ২ টি টিভি ৫০ হাজার, টিভিএস ব্রান্ড এর মটর সাইকেল স্কুটি ১ লাখ ৫০ পঞ্চাশ হাজার, গলায় থাকা ৮ আনা ওজনের একটি স্বর্নের চেইন ৬৫ হাজার, কানের দুল ৬ জোড়া ৩ লাখ এবং নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে বাদী শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভর্তি (রেজিঃ নং-৬৪৭৭২/৩২০) হতে গেলে আসামীরা সেখানে গিয়েও মারধর করে এবং জামা কাপড় টানা হেচড়া করে শ্লীতহানী করে।

বাদীর পরিবার ও তার আত্মীয় স্বজনদের দাবী- গত ৫ আগষ্টের পর থেকে কতিপয় লোকজন কলোনিতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছে। শেষ পর্যন্ত তারা বসতঘরে হামলা চালিয়েছে। শুধু তাদের ঘরেই নয় হালিম শাহ, নাজমা, সুমি, সালমা, সালাম, রিপা ও পাখি সহ আরে ৪/৫ জনের বসতঘর ভেঙ্গে মালামাল নিয়ে গেছে।

অপরপক্ষের দাবী, আ.লীগের সমর্থক পরিচয়ে গত ১৫ বছরে কলোনি কে নরক রাজ্যে পরিণত করেছে। এখনও তার বিএপি সমর্থদের উপর হামলা মামলা করে যাচ্ছে। তারা বিএনপি সমর্থকদের বসতঘর ভেঙ্গে নগদ অর্থ সহ মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। যেমন- রুস্তম আলী হাওলাদার (৬৪), মোঃ কালাম খান (৩২), শুক্কুর হাওলাদার (২০), মামুন বেপারী (৪৫), রুবেল (৩৮), ইব্রাহীম খলিফা (৩০), হালিম ফকির (৫০), টিপু সিকদার (৩০), জসিম হাওলাদার (৩৮), কুলছুম বেগম (৫০), ঝুমুর (৪২), আবুল হাওলাদার (৩৫), সেন্টু হাওলাদার (৩২), পারুল বেগম (৪০), রুমা (৩৯) ও লাকি (৩৪)। তারাও মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

নগরীর ১০ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোঃ শাহদাৎ হোসেন তোতা বলেন, আমি যতটুকু শুনেছি কলোনিতে বিএনপি লোকজনদের উপর হামলা চালানো হয়েছে এবং তাদের বসতঘর ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সম্প্রতি অন্য এক মামলায় কোর্ট স্যালেন্ডার করার সময় আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করে। তাই তার স্বাক্ষাৎকার নেয়া সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় একাধিক নিরীহ বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কলেনিতে মূলত ক্ষমতার লড়াই চলছে। আর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এ দ্বন্দ্বের মূল কারণ। বিষয়টি সমাধান না হলে পরবর্তীতে খুনের ঘটনাও ঘটতে পারে বলে মনে করেন তারা। গ্রেফতারের ভয়ে অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। এক পক্ষ মামলা দিয়েছে আর অপর পক্ষ মামলা দেয়ার জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেছে। হয়তো ২/১ দিনের মধ্যে থানায় মামলা না দিতে পারলে আদালতে মামলা দায়ের করবেন বলে শুনেছেন।