বরিশালে চেকপোস্টের শিক্ষার্থীদের মারধরে যুবক নিহত


স্টাফ রিপোর্টার: বরিশালে চেকপোস্টে দায়িত্বরত শিক্ষার্থীদের বেধরক মারধরে রাসিব আকন (১৯) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাত ইউনিয়নের ইউনুস আকনের ছেলে। রাসিব পেশায় গভীর নলকূপ স্থাপন কাজের শ্রমিক। গতকাল মঙ্গলবার ভোর রাতে নগরীর হাতেম আলী চৌমাথা এলাকায় তার সঙ্গে ছুড়ি পাওয়ার অভিযোগ তুলে আটক করে। এরপর বেধরক মারধর শেষে অচেতন অবস্থায় বেলা ১১টায় কোতয়ালী মডেল থানায় নিয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। এরপর পুলিশের পরামর্শে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী কমিশনার নাফিসুর রহমান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, নগরীর নথুল্লাবাদ থেকে ব্যাটারিচালিত রিক্সায় এক যাত্রী হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় পৌছুলে সড়কে থাকা শিক্ষার্থীরা তল্লাশী করে। এ সময় যাত্রীর কাছে একটি চাকু ও বগি দা পায়। যাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে থানার উদ্দেশ্যে নিয়ে গেছে শিক্ষার্থীরা।

কোতোয়ালি মডেল থানার সাব-ইন্সপেক্টর মো. মাইনুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের বরাতে জানান, রাসিব হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকা অতিক্রমকালে শিক্ষার্থীরা আটকে তল্লাশী করে। এ সময় রাসিবের কাছে একটি চাকু ও দা পাওয়া যায়। যা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রাসিবের সাথে উপস্থিতিতের কথা কাটাকাটি হয়। পরে ডাকাত সন্দেহে তাকে গণধোলাই দেয়া হয়। তিনি জানান, রাসিবকে শিক্ষার্থীরা কোতোয়ালি মডেল থানায় নিয়ে গেলে তার অবস্থা মুমুুর্ষ দেখে হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। শিক্ষার্থীরা রাসিবকে হাসপাতালে নিয়ে আসে, সে সময় পুলিশ সদস্যরা হাসপাতালে তাদের সাথে আসে। হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করা হয়েছে। মৃতের মরদেহ বর্তমানে হাসপাতালের লাশ রাখা কক্ষে রয়েছে। ময়না তদন্তের পর মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

রাসিবের মা শিউলী বেগম বলেন, তার স্বামী ইউনুস আকনের সাথে সিলেটে গভীর নলকুপ স্থাপনের কাজ করে ছোট ছেলে রাসিব। সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় সিলেট থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। পরে বরিশাল শহরের চৌমাথা না কোথায় তাকে ছাত্ররা আটকায়। শিউলী বেগম বলেন, ছেলের কাছে চাকু, না যেন কি পেয়েছে। এইজন্য পিটিয়েছে। পরে আমাদের ফোন করে ছেলেকে নিয়ে যেতে বলেছে। আমি এসে কোতয়ালি মডেল থানায় ছেলেকে পেয়েছি। তখন ছেলে একটু পানি খেতে চায়। পানি দেয়ার সাথে সাথে মারা গেছে। এসময় তিনি বলেন, আমি ধরে নিলাম আমার ছেলে অপরাধী তার মানে এই না যে আমার ছেলেকে পিটিয়ে মারতে হবে। আমি আমার ছেলেকে মারার বিচার চাই। এ ঘটনায় মামলা করবেন বলেও জানিয়েছেন শিউলী বেগম।

তবে শিক্ষার্থীদের দাবি তারা রাসিবকে মারেনি মেরেছে উৎসুক জনতা। সরকারি সৈয়দ হাতেম আলি কলেজের ডিগ্রীর শিক্ষার্থী শেখ সাফায়েত জানান, পুলিশের অনুপস্থিতে বেশ কিছু দিন ধরে সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে আসছি আমরা শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় আজও দায়িত্ব পালনকালে নগরীর চৌমাথা এলাকায় একটি ব্যাটারিচালিত অটো রিক্সা তল্লাশি করার সময় একজনকে সন্দেহ হলে তার (রাসিব) ব্যাগ তল্লাশি করে আমাদের শিক্ষার্থীরা এসময় ব্যাগে থাকা জামাকাপড়ের নিচ থেকে একটি চাকু ও ১ হাত পরিমাণ একটি দা পাওয়া যায়। এসময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি সদউত্তর দিতে পারেনি, এসময় সেখানে থাকা সাধারণ মানুষ ডাকাত ভেবে তাকে মারধর করে এসময় আমরা শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করি এবং প্রথমে কোতয়ালি মডেল থানায় নিয়ে যাই পরে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন। কেন বেলা ১১টায় তাকে থানায় আনা হয় এমন প্রশ্নে তিনি জানান, একই সময় একটি বাস আমরা তল্লাশি করি সেখান থেকেও কিছু মাদক দ্রব্য পাই যার ফলে আমাদের থানায় যেতে বিলম্ব হয়। একজন মানুষকে পিটিয়ে মারা কতটুকু যৌক্তিক এমন প্রশ্নে সাফায়েত জানান, বেশ কিছুদিন ধরে আইনশৃংঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্যরা যেহেতু ছিলো না তার ফলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি বেড়ে যায় এমনটা সন্দেহ থেকে উৎসুক জনতা তাকে মেরেছে।

কোতোয়ালি মডের থানার সহকারি পুুলিশ কমিশনার নাফিসুর রহমান জানান, মঙ্গলবার ভোর রাতে নগরীর হাতেম আলী চৌমাথা এলাকায় শিক্ষার্থীদের চেকপোস্টে তল্লাশীকালে রাসিবের কাছে একটি ছুড়ি পাওয়া যায়। তখন তাকে মারধর করে উপস্থিত ছাত্র জনতা। এরপর বেলা ১১ টার দিকে রাসিবকে অচেতন অবস্থায় থানায় নিয়ে আসে শিক্ষার্থীরা। তখন রাসিবকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দিলে শিক্ষার্থীরা তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক রাসিবকে মৃত ঘোষণা করেন। ভোর রাতে চেকপোস্টে রাসিবকে মারধর করা হলে বেলা এগারোটায় কেন থানা পুলিশের কাছে নেয়া হলো? এমন প্রশ্নে সহকারি পুলিশ নাফিস বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। বিস্তারিত তদন্ত করে বলা যাবে।