রবিউল ইসলাম রবি ॥ বরিশাল কর কমিশনার কার্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে ৫ ভাই মিলে রাজত্ব কায়েম করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা নিজ স্বার্থ আদায়ে সরকারী রাজস্ব খাতে কর কমানো বাড়ানোসহ তদবির সুপারিশের মাধ্যমে অফিসিয়াল নানা কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকেন। এমন অভিযোগ এনে চলমান মাসের ১৮ ফেব্রুয়ারী রোববার সাংবাদিক সংগঠন ও পত্রিকা অফিস বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন নগরীর বাংলা বাজার এলাকার বাসিন্দা মো: আতাহার উদ্দিন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের অনেক বিষয়ের সত্যতা মিলেছে।
অভিযোগের তথ্যসহ অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরিশাল কর কমিশনারের কার্যালয় সার্কেল-৮ এ স্টোনো পদে মোঃ রতন মোল্লা চাকুরী নেয়ার পূর্বে নগরীর সদর রোড সংলগ্ন বাটার গল্লির একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার চাকুরী করতেন। এ সময় তিনি জমির দালালিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন। সরকারী চাকুরী হবার পরও পূর্বের অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। বরিশাল পূর্ব বগুড়া রোড ‘সাউথ ইউনিভার্সেল মেডিকেল সার্ভিসেস’ নামক প্রতিষ্ঠানে শেয়ারে ব্যবসায় জড়িত রয়েছে। স্টোনো পদে থাকায় অফিসের নির্দেশে তার দায়িত্ব হল বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ ডাক্তারদের কর এর তালিকা করা। যে তালিকা রতন মোল্লা তার স্বজনপ্রতি লোকজনদের সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকেন। বরিশালের ছোট-বড় ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডাক্তারদের আয়ের অনুকূলে কর দেয়ার সঠিক তালিকা করেন না। অফিসের বড় বড় ফাইলের ট্রাক্স কমানো, অডিটের কথা বলে ব্যবসায়ীদের হয়রানী, কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বদলি বাণিজ্য ইত্যাদি। এককথায় বরিশালে কর অফিসে রতনকে অর্থ দিলে নিয়মের কাজ অনিয়মে হয় আবার অনিয়মের কাজ নিয়মে হয়। দীর্ঘদিন ধরে একতরফাভাবে এ সব কার্যক্রম করে আসছেন রতন মোল্লা। একাধিক স্থানে ক্রয় করেছেন জমি, হয়েছেন ভবন মালিক।
রতনের দু’ভাই হলেন, মো: ইব্রাহীম মোল্লা ও লিটন মোল্লা। তারাও বরিশাল কর কমিশনারের কার্যালয় সার্কেল-১৬ (লালমোহন, ভোলা) তে অফিস সহায়ক পদে কর্মরত রয়েছে। তাদের অপর ভাই লিটন মেল্লা নোটিশ সার্ভার পদে কর্মরত রয়েছেন বরিশাল কর কমিশনারের কার্যালয় সার্কেল-১৯ ( গলাচিপা, পটুয়াখালী) তে। দুই সার্কেলেই রাজত্ব করছেন করছেন ইব্রাহীম ও লিটন। তাদের অর্থ অর্থ না দিলে কর দিতে আসা লোকজনদের ঘুরাতে থাকেন বলে জানা গেছে। ব্যবসায়ীদের কর বাড়ানো কমানো চাবিকাঠি হলেন তারা। এ তিন ভাইয়ের মতই অপরদিকে বরিশাল কর অঞ্চল অফিসে একতরফা রাজত্ব করছে মো: সাইদুর রহমান ও তার ভাই রুবেল হাওলাদার।
বরিশাল কর অঞ্চল অফিসে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে মো: সাইদুর রহমান চাকুরী করলেও বর্তমানে নাজিরের দায়িত্ব পালন করছেন। অফিসে নানা মালামাল ক্রয়ের নামে, ঝামেলা যুক্ত ফাইল অর্থের বিনিময়ে মুক্ত করা, কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তদরির সুপারিশের মাধ্যমে অর্থ আদায় করা সাইদুরের নেশা পেশায় রুপান্তরিত হয়েছে। নগরীর পলাশপুর এলাকায় নিমার্ণ করেছেন ভবন। তার অফিসিয়াল কার্যক্রমের একাধিক ফাইল পর্যবেক্ষণ করলেই বেড়িয়ে আসবে অনিয়মের এ সব তথ্য। সাইদুরের ভাই রুবেল হাওলাদার হলেন, কোম্পানী-১ এর নোটিশ সার্ভার। চাকুরীর হবার পরই ভাগ্য খুলে যায় রুবেলের। হয়েছেন ভবন মালিক। এককথায় বরিশাল কর অঞ্চল অফিসে রাজত্ব কায়েম করছে ৫ ভাই।
কর কমিশনার (চ:দা:) মো: সারোয়ার হোসেন চৌধুরী অফিস নম্বরে কল দিলে তার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট (পিএ) বিষয়টি জানতে চান। অভিযোগে অভিযুক্তরাদের বিষয় সম্পর্কে বললে জানান, স্যার ঢাকা মিটিং এ আছেন। অভিযোগের বিষয়ে স্যার কে জানাবো। স্যার যা বলবেন তা আপনাকে জানানো হবে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কিছু জানাননি পিএ।
সদর দপ্তর (প্রশাসন), সার্কেল-০২(কোম্পানীজ) ও সার্কেল-০৮ উপ কর কমিশনার মোহাম্মদ মোইনুল হক মজুমদার এর মুঠোফোনে কল দিলে রিসিভ করে ৬ সেকেন্ড পর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর কল দিলে ধরেননি তিনি।
অভিযুক্ত রতন মোল্লার মুঠোফোন কল দিয়ে অভিযোগের বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি চাকুরীর পূর্বে একজন সংবাদকর্মী ছিলেন বলে জানান দেন। তারপরও অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে তার অফিসের নতুন এক স্যার যোগদান করতেছেন সেই ব্যস্ততা বলে এড়িয়ে যান।
অভিযুক্ত সাইদুর রহমান অভিযোগের বিষয় সম্পৃক্ত তথ্য জানতে চাইলে, তিনি আবেদনকারীর জানতে চান। নাম শুনে বলেন এ ব্যক্তিকে আমি চিনি না। অভিযোগের বিষয়টি এই শুনলাম। কে বা কারা কিসের জন্য দিয়েছেন তা জানেন না তিনি।
অভিযোগের বিষয় শোনার পর লিটন মোল্লা বলেন, রোগী নিয়ে এখন গাড়িতে রয়েছেন তিনি। তাই এখন কোন কথা বলতে পারবেন না তিনি। অন্যদিকে তার ভাই ইব্রাহীম মোল্লার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
রুবেল হাওলাদার বলেন, তিনি একজন ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী। স্যারদের নির্দেশ মেনেই তার সকল কাজ সম্পন্ন করতে হয়।