বাউফলে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ


বাউফল প্রতিনিধি: নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন, তুমি আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিক জাতী উপহার দিবো। শিক্ষাই জাতীর মেরুদন্ড। আর ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের প্রথম হাতেখড়ি হয় প্রাথমিকের শিক্ষকদের দ্বারা। আনন্দ বিনোদন ও মায়াবী আদরে শিশুদের সেই হাতে খড়ি দেওয়ার জন্য সরকার চালু করছে প্রাক প্রাথমিকের। রয়েছে সেখানে শিশু খেলনা সহ নানা উপকরণ। কিন্তু বাউফলের ৮১ নং দক্ষিণ শৌলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রাক প্রাথমিক সহ অন্যান্য ক্লাসে উপস্থিত থাকছেননা শিক্ষকরা। নাই কোন শিশুদের আনন্দ বিনোদনের খেলনা। শিক্ষকরা কোমলমতি শিশুদের পাঠদান রেখে, গ্রামের বাড়ীগুলোতে পাঠিয়ে সংগ্রহ করে আনেন দুধ, ডিম, কলা, পেপে, নানা ধরনের সবজি। পটুয়াখালীর বাউফলে ২৩৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। উপজেলার সদর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে ৮১ নং দক্ষিন শৌলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় তার মধ্যে একটি। মাত্র ৬জন শিক্ষক দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে এক জনের বাচ্চা অসুস্থ্য থাকায় তিনি রয়েছেন অনুপস্থিত। অবশিষ্ট ৫জন শিক্ষক থাকলেও প্রধান শিক্ষক শামীম জাহান লাইজু ও কণা বেগম নামে দুইজন অনুপস্থিত থাকেন প্রায়ই। নিয়ম অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকগণ উপস্থিত না থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ছুটি নিতে হয়। কিন্তু এই বিদ্যালয়টির চিত্র সম্পূর্ন ভিন্ন। প্রধান শিক্ষক নিজের খেয়াল খুশিমতো স্কুলে আসেন। আবার সপ্তাহ অবদি স্কুলে না এসে একদিন এসে পিছনের উপস্থিতির হাজিরা টানেন। অনেক সময় বগলদাবা করে হাজিরা খাতা নিয়ে যান তার বাসায়। যে কারণে অন্যান্য শিক্ষকরাও নানান অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন। স্থানীয় অভিভাবকদের দাবী, দুই একজন শিক্ষক ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষকরা বাচ্চাদের পড়াতে অনাগ্রহ। যারা ক্লাসে থাকানে মেয়ে শিক্ষার্থীদের দিয়ে মাথার উকুন পরিস্কার করেন আবার কতেক শিক্ষার্থীদের দিয়ে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে পাঠিয়ে দুধ, হাস, মুরগীর ডিম,থানকুনি পাতা, পেপে, সবজি, কাচা আম ও পানিতাল সংগ্রহ করেন। যে কারণে স্থানীয় অনেক অভিভাবক শিক্ষকদের উপর বিরক্ত হয়ে বাচ্চাদের অন্যত্র নিয়ে ভর্তী করেছেন। কেউ কেউ আবার মাদ্রাসা ও মক্তবে দিয়েছেন সন্তানদের। বছর তিনেক আগে বিদ্যালয়টিতে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও প্রধান শিক্ষকের খামখেয়ালীপনার কারণে ছাত্র সংখ্যা কমে দাড়িয়েছে মাত্র ৬৫ জনে।

স্থানীয় অভিভাবক নিউটন সহ কতিপয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, প্রধান শিক্ষক দুপুর ১২টায় বিদ্যালয়ে আসেন আবার ঘন্টা দেড়েক থেকেই চলে যান। বিদ্যালয়ে না এসেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দেওয়া তার নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার। বিদ্যালয়ে এসে অধিকাংশ সময় ফোনে টিকটক দেখে সময় পাড় করেন। সহকারী শিক্ষক কণা বেগম নিজে ক্লাস না করে মো. মাঈন উদ্দিন (দপ্তরী কাম নৈশপ্রহরী) কে দিয়ে তার ক্লাস নেন। স্থানীয় অভিভাবকরা এসব কথা প্রধান শিক্ষককে জানালে (তিনি) প্রধান শিক্ষক তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন এবং তাদের সন্তানদের অন্যত্র নিয়ে ভর্তী করতে বলেন। তিনি ইচ্ছেমত ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার ফলাফল তৈরী করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য বরাদ্দকৃত ২০১৩ থেকে ২০২৪ সালের সকল টাকা তিনি নিজেই আত্মসাৎ করেছেন। বিদ্যালয়টিতে উন্নয়ন বা ক্ষুদ্র মেরামতের কোন চিহ্নই নাই। প্রাক প্রাথমিকের বাচ্চাদের যেসব উপকরণ থাকার কথা সেখানে প্রাকের ক্লাসরুমে একটি প্লাস্টিকের চাটাই ছাড়া কিছুই নেই। স্কুলের ব্যবহৃত ২টি ল্যাপটপ ও রাউটার প্রধান শিক্ষক তার মাধ্যমিকে পড়া ছেলের কাজে বাসায় নিয়ে ব্যবহার করছেন।

এছাড়া শিক্ষকদের বসার চেয়ার যেমন নেই তেমনি শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চগুলোও ঝুকিপূর্ণ। সম্প্রতি সানজিদা নামক এক শিক্ষক ভাঙ্গা চেয়ার থেকে পরে গুরুতর আহত হয়েছেন। উন্নয়ন বঞ্চিত এক বিদ্যালয় এটি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় অভিভাবকগণ ও কয়েকজন সহকারী শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিষয় কথা বলায় প্রধান শিক্ষকের ধারা বিভিন্ন ভাবে হয়রানীর শিকার হতে হয়। বিষয়টি শিক্ষকরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতিকুল ইসলামকে জানালে তিনি এ বিষয়ে নেননি কোন ব্যবস্থা। এছাড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোল্লা বখতিয়ার ও বিভাগীয় উপ-পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিনের কাছে অভিযোগ দিলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ অদৃশ্য কারনে। একাধিক শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের অনিয়মের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সাথে আলাপ করলে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলাম শিক্ষকদের হুমকী প্রদান করেন এবং চাকুরীর খাতায় লাল কালী বসিয়ে দিবেন বলেও হুমকী প্রদান করেন। সৈরাচার সরকারের প্রভাবশালী সাবেক এমপি চীফ হুইপ আ.স.ম ফিরোজের ভাতিজা মনির হোসেন মোল্লার ক্ষমতা প্রয়োগ করে শিক্ষকদের বিভিন্ন ধরনের হয়রানী করেছিলেন এই শিক্ষক যার প্রভাব এখনও দেখাচ্ছেন। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক কণা বেগমকে অন্যত্র সরিয়ে দিলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ঘটবে এবং বিদ্যালয়টি মানসম্মত প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারবে এমনটাই প্রত্যাশা ক্যাচমেন্ট এড়িয়ার অভিভাবকদের।

অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক জানান, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি আজ বিদ্যালয়ে নাই। আপনার সামনা সামনি কথা বলবো। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম জানান, আমার পদস্থ কর্মকর্তার নির্দেশ ছাড়া ওই স্কুলের বিষয়ে কোন কথা বলতে পারবোনা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোল্লা বখতিয়ার জানান, আমি জানলাম, যদি সত্যতা পাওয়া যায় যেভাবে নীতিমালা আছে তদন্ত করে বিভাগীয় মামলা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিনুল ইসলাম জানান, শীঘ্রই ওই স্কুল পরিদর্শনে যাবো। নিয়মের ভিতরে না থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।