অনলাইন ডেস্ক: নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপ বিক্রি মানুষ হত্যার মতো অপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান। নকল মেডিকেল সামগ্রী বা ওষুধ বিক্রির চেয়ে মাদকের ব্যবসা করা ভালো বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপ বিক্রয় প্রতিরোধে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সভাপতি হিসেবে যোগ দেন ভোক্তার ডিজি। সেখানেই এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, নকল মেডিকেল সামগ্রী বা ওষুধ বিক্রির চেয়ে মাদকের ব্যবসা করা ভালো। কারণ, মাদক ৫-১০ বছর পরে মানুষকে মৃত্যুর মুখে নিয়ে যায়। কিন্তু নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপের ভুল রিপোর্টের ফলে ভুল চিকিৎসা পেয়ে মানুষ যেকোনো সময় মারা যেতে পারে। এটি মানুষ হত্যার মতো অপরাধ। চাল-ডালের দাম বাড়ানোর থেকে অনেক ভয়াবহ অপরাধ।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আমরা ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছি। আমাদের দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যার একটি বড় অংশ বাসায় ডায়াবেটিস স্ট্রিপ দিয়ে সুগার পরিমাপ করে। অথচ এই স্ট্রিপই নকল হচ্ছে। এটা দুঃখজনক। রোস নামের একটি বড় আন্তর্জাতিক স্ট্রিপ তৈরি করা কোম্পানির প্যাকেট আমাদের নয়াপল্টনে তৈরি হয়। আমরা এমনও প্যাকেট পেয়েছি, যেটার মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেওয়া ২০২৫ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি। এমন তারিখ তো পৃথিবীতে হওয়া সম্ভব নয়। অসাধু ব্যবসায়ীরা নকল করতে করতে ২৯ ফেব্রুয়ারি তারিখ আবিষ্কার করে ফেলেছেন।
ভোক্তার ডিজি আরও বলেন, বিদেশ থেকে লাগেজের মাধ্যমে যে পণ্যগুলো ঢুকছে সেগুলো আমরা বন্ধ করতে পারিনি। তাই কাস্টমসের নজরদারি বাড়াতে হবে। যাতে অবৈধভাবে লাগেজের মাধ্যমে এসব মেডিকেল সামগ্রী না ঢুকতে পারে। এতে আমরা রাজস্ব যেমন হারাচ্ছি, তেমনি মানুষকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছি। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে এই বিষয়ে আরও মনোযোগী হতে হবে। এতদিন কেন এটি তাদের নজরে আসেনি। এই বিষয়ে তাদের আরও গভীরভাবে কাজ করতে হবে। আমরা সহযোগী হিসেবে আপনাদের পাশে আছি। মূল কাজটা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের।
যারা নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপ বিক্রি করছেন, তাদের লাইসেন্স অচিরেই বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করা হবে। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিটি আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মাসিতে নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপের সন্ধান পায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এর সূত্র ধরে অভিযান চালিয়ে ফার্মা সলিউশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এসব নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপ সরবরাহের প্রমাণ মেলে। প্রতিষ্ঠানটি এসব স্ট্রিপের প্যাকেট তৈরি করে নয়াপল্টনের প্রিন্ট ওয়ান নামের একটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে। তবে ডায়াবেটিসের স্ট্রিপগুলো লাগেজ পার্টির মাধ্যমে বিদেশ থেকে আনা হয় বলে দাবি করে ফার্মা সলিউশন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফার্মা সলিউশনকে সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং প্রিন্ট ওয়ানকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আজ ডায়াবেটিস স্ট্রিপ আমদানীকারকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগ) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের প্রধান আব্দুল জব্বার মন্ডল, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাহবুব হোসেন, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের সচিব মুহাম্মদ মাহবুবুল হক, কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী।
তারা সবাই নকর স্ট্রিপ আমদানি, তৈরি ও বিক্রি প্রতিরোধের ওপর জোর দেন। এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তির দাবি করেন।
মাহবুব হোসেন বলেন, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ডায়াবেটিস স্ট্রিপ আমদানির অনুমোদন দেয় ও প্রতিনিয়ত মনিটরিং করে। আমরা আশা করি নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপসহ মেডিকেল সামগ্রী বিক্রি প্রতিরোধে ভোক্তা অধিদপ্তরসহ সরকারের প্রতিটি সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করবে। এটা কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মনিটরিং করা সম্ভব নয়।
সবায় উপস্থিত ছিলেন ফার্মা সলিউশনের প্রধান নির্বাহী পল্লব চক্রবর্তী ও প্রিন্ট ওয়ানের সত্ত্বাধিকারী লুৎফর রহমান। তারা আত্মপক্ষ সমর্থন করেন এবং মাফও চান।
পল্লব চক্রবর্তী নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপের প্যাকেটের বিষয়ে দায় স্বীকার করেন। তবে এ ঘটনায় তার প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মীকে দায়ী করেন। বিভিন্ন যুক্তিও উপস্থাপন করেন তিনি।
লুৎফর রহমানও নিজের দায় স্বীকার করে সবার সামনে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং আগামীতে এসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন বলেও ঘোষণা দেন।