শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ॥ মহাসড়কের যানবাহন আটকা পড়ে চরম ভোগান্তি

স্টাফ রিপোর্টার: চাকরিতে কোটা পূর্নবহালের প্রতিবাদে বরিশাল বিশ^বিদ্যালয় ও সরকারি ব্রজমোহন (বিএম)
কলেজের শিক্ষার্থীরা মহাসড়কের পৃথক দু’ স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করে। বিএম কলেজের
শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধে বরিশালের প্রবেশদ্বার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও বরিশাল
বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ঢাকা-পটুয়াখালী মহাসড়কের দু’ পাশে যানবাহনের
দীর্ঘ সারি দেখা যায়। এতে করে সাধারণ মানুষরা ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে অনেকেই বাধ্য
হয়ে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার এলাকা পায়ে হেটে পুনরায় যানবাহনে উঠতে সক্ষম হয়। গতকাল
রবিবার বেলা ১১টার দিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের বরিশাল-কুয়াকাটা
মহাসড়ক এবং বেলা ১২টা থেকে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ
করে। টানা পঞ্চম দিনের মত এই কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে করে চরম দুর্ভোগে
পরে দুরপাল্লা ও অভ্যান্তরীন রুটের গাড়ির যাত্রীরা।

উভয় এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকেই বরিশালে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে এর
মধ্যেই কোটা পূর্নবহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। আন্দোলন
শুরুর ঘণ্টাখানেক পরে মুুষলধারে বৃষ্টি নামলে, সেই বৃষ্টিতে ভিজেই আন্দোলন চালিয়ে যান
শিক্ষার্থীরা। আর মুষলধারে বৃষ্টির মাঝে কয়েক দল শিক্ষার্থী সড়কের বিভিন্ন স্থানে ফুটবল ও
ক্রিকেট খেলায় মগ্ন হন। খেলার ফাঁকে ফাঁকে তাদেরও কোটা বাতিলের দাবিতে স্লোগান
দিতে দেখা যায়।

শিক্ষার্থীরা বলেন, সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল
সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের প্রতিবাদে এবং সকল চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে
মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে তারা আন্দোলন করছে। তাদের দাবি মানা না হলে কঠোর
আন্দোলন নিতে বাধ্য হবে। এদিকে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করলে সড়কের
দুইপাশে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে। ভোগান্তিতে পরেন যাত্রী সহ সাধারণ মানুষ। অনেকে
পায়ে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দেন। তবে রোগী বহনকারী অ্যাম্বুুলেন্সসহ জরুরি সেবার যানবাহন
চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটাতে দেখা যায়নি শিক্ষার্থীদের।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান বলেন, মেধার ভিত্তিতে
কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে রাষ্ট্র নাগরিকদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। মহান
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ পেয়েছি। স্বাধীনতার সূর্য সন্তান মুক্তিযোদ্ধারে প্রতি আমাদের
শ্রদ্ধা আমৃত্যু। এই আন্দোলনেও অনক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রয়েছেন। আমাদের একটাই দাবী,
কোন বরাদ্দ কোটায় নয় মেধায় চাকরি হবে। একটি দেশের ৫৬ শতাংশ কোটায় চাকরী পৃথিবীর
কোথাও হয় না। কোটা পদ্ধতি বহাল করে শিক্ষিত মেধাবী যুবকদের কটাক্ষ করছে সরকার। আমরা
এর বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আবদুল কাইউম বলেন, শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা কথা বলছি।
সড়কে চলাচলকারীদের যেন দুর্ভোগ না হয় সে বিষয়টা গুরুত্ব দিতে শিক্ষার্থীদের বলা করা
হচ্ছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটনের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ আর মুকুুল বলেন,
শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবসময় সজাগ আছে। যানবাহন ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার
স্বার্থে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি
যাতে তারা দ্রুত রাস্তা ছেড়ে দেয়।

অপরদিকে একই দাবিতে সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীরা বরিশাল কেন্দ্রীয়
নথুল্লাবাদ বাস স্টান্ড এলাকার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে এতে করে বরিশাল-ঢাকা মহসড়কের
দুইপাশেই তীব্র যানযটের সৃষ্টি হয়।
সরকারি ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান দিপু জানান, চাকরি মেধার ভিত্তিতে
হবে। এখানে কোটা বহাল স্পষ্ট বৈষম্য। আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবো। আমাদের
ঘোষিত ৪ দফা বাস্তবায়ন না হলে আরো কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে বলেও হুশিয়ারি
দেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন বলেন,
শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে সড়ক অবরোধ করেছে। তাদের সাথে আমরা কথা বলছি সড়ক ছাড়ার
জন্য। তারা বলেছেন সড়ক ছাড়বেন। তাদের সাথে কথা বলা হচ্ছে দ্রুতই হয়তো ক্যাম্পাসে ফিরে
যাবে।
উল্লেখ্য, ৫ জুন সরকারি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটা
বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। ফলে সরকারি চাকরিতে ৩০
শতাংশ মুুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল হয়। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জারি
করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এ রায় দেন। এর প্রতিবাদে গত
সোমবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু
করেন।