চাচা ভাতিজার দ্বন্দ্ব মীমাংসার নামে সালিশদার এর চাঁদা দাবি


স্টাফ রিপোর্টার : এক শতাংশ জমি ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে চাচা ভাতিজার মধ্যে অর্থ লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়। আবার এই এক শতাংশ জমির মধ্য রয়েছে একই বাড়ির মো. লিটন হাওলাদারের বসতঘরের অংশসহ অল্প একটু জমিও চলে গেছে জনগণের পথ চলাচল করা সরকারি রাস্তায়। ভাতিজা চাচাকে না জানিয়ে ওই এক শতাংশ জমি লিটনের কাছে বিক্রি করে দেন। যে কারণে চাচা ভাতিজার মধ্যে দ্বন্দ্ব আরো বেড়ে যায়। বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ উলাল বাটনা গ্রামের মো. কাদের মোল্লা (৭০) ও তার ভাতিজা মো. জাকির হাওলাদারের (৩৩) মধ্যে এ দ্বন্দ্ব চলমান রয়েছে।

মীমাংসার নামে সালিসদাররা পক্ষ-বিপক্ষের কাছে চাঁদা দাবি করছে। মুঠোফোনে সেই চাঁদা দাবির রেকর্ড এলাকাজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। চরবাড়িয়া ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে ইতালী শহিদ ৫ আগস্টের পর পলাতক থাকলেও তার সাঙ্গপাঙ্গরা এলাকাজুড়ে এখনও নানা অপরাধমূলক কাজ করে যাচ্ছে। কাউনিয়া থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে ফ্যাসিবাদ ইতালী শহিদের চক্রটি এলাকায় সক্রিয় বলে জানা গেছে।

সালিশ মীমাংসার নামে চাঁদা দাবি ফ্যাসিবাদের দোসর মো. মাসুদ হাওলাদার (৫৫), ইউসুব ফকির (৫০), বিপ্লব আকন (৫২) ও মহাসিন হাওলাদার (৫২)।

সরেজমিনে জানা গেছে, দক্ষিণ উলাল বাটনা গ্রামের জব্বার মোল্লা মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে ওহাব হোসেন মোল্লা ও কাদের মোল্লা। ওহাব মোল্লা মারা যাবার পর তার ২ সংসারে ওয়ারিশ হয় স্ত্রী সহ ৫ জন। প্রথম সংসারে স্ত্রী মৃত্যুর পর ওয়ারিশ হন জাকির ও তার এক বোন। অপরদিকে কাদের মোল্লা এখনও জীবিত রয়েছেন। ভাগ বণ্টনে জাকির জমি পেয়েছে বাড়ির মধ্যে এক শতাংশ। সেই এক শতাংশ জমিতে রয়েছে একই বাড়ির লিটনের বসতঘরের অংশ সহ রাস্তার অংশ। এমন পরিস্থিতির মধ্যে প্রায় দেড় বছর পূর্বে জাকির তার জমি স্থানীয় ইব্রাহীম ফকিরের (৪০) মধ্যস্থতায় বিক্রির উদ্যোগ নেয়। জাকিরের চাচা এই এক শতাংশ জমি নেয়ার প্রস্তুতি নেন।

কাদের মোল্লা বলেন, জমি ক্রয় করার জন্য জাকিরকে প্রথম দফায় লিখিত চুক্তি রেখে ৭০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছিল। পরে আবার নগদ ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়। কিন্তু জমি আমাকে না দিয়ে লিটনকে দিয়ে দিয়েছে। আবার দেয়াড় পরও আমার কাছে শিকার পায়নি।

জাকির বলেন, চাচা যা বলেছেন তা সত্য। তবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দেয়াড় পর বাকি টাকা দিয়ে জমির দলিল নিতে বলেছিলাম। তখন চাচায় বলেছিল- রাস্তার মধ্যে আবার লিটনের ঘরের মধ্যে তোর জমি ঢুকে গেছে। এখন যে কী করব। জমি তো পুরো নাই। পরে চাচায় বাকি টাকাও দেয় না। আর দলিলও নেয় না। উলটো টাকা ফেরত চায়। চাচার এমন কথা শুনে আমি কয়েক মাস আগে লিটনের কাছে ২ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেই । তাছাড়া চাচায় বলেছিল, জমি থেকে লিটনের ঘর ভেঙ্গে দাও তারপর বাকি টাকা নিয়ে যাও, নয়তো টাকা ফেরত দাও।

পরে কাদের মোল্লা স্থানীয় ওই সালিসদারের কাছে বিচার চায়। মুঠোফোনে লিটনের স্ত্রী ফাতেমার কাছে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা চায় সালিসদার মাসুম হাওলাদার। অপরাধ হল- জমি কেন ক্রয় করেছেন। অপরদিকে সালিসদার মহাসিন ঘোষণা দেন- জাকির কেন জমি লিটনের কাছে বিক্রি করছে, সে জন্য তার জরিমানা ৩ লাখ টাকা। রেকর্ডটি এলাকায় ভাইরাল হয়েছে। যা লিটনের স্ত্রী ফাতেমা এবং জাকির এর সত্যতা নিশ্চিত করেন।

অভিযুক্ত সালিশদার মাসুম বলেন, জমি বিক্রয়ের বিষয়টি প্রথমে শিকার পায়নি জাকির। আ.লীগ শাসনামলে ইতালী শহিদ কে ম্যানেজ করে এলাকায় চলতে হয়েছিল। আর এখানে ভুল করছে জাকির। তিনি ৬০ হাজার জরিমানা করেছেন কিনা? বারবার জানতে চাইলেও এ প্রসঙ্গ ঘুরে জমির দ্বন্দ্বের সূত্রপাতগুলো বুঝান।

সালিশদার ইউসুফ বলেন, ওই বাড়িতে জমি নিয়ে আগে থেকেই দ্বন্দ্ব চলে আসছে। আগেও সালিশ হয়েছিল। লিটনের ৬০ হাজার টাকা আর জাকিরের ৩ লাখ টাকা জরিমানা আলোচনায় আসলেও বিষয়টি কার্যকর হয়নি। তবে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত রয়েছেন কাউনিয়া থানার এসআই সাদ্দাম।

রাত পৌনে নয় টার দিকে মুঠোফোনে পরপর তিন বার সাদ্দামের মোবাইল নম্বরে কল দিলেও ধরেননি।