ঝাঁকে ঝাঁকে ‍ইলিশ সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে!

ঝাঁকে ঝাঁকে ‍ইলিশ সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে!

বরগুনা: সাগর থেকে ইলিশ নিয়ে ফিরছেন জেলেরা। বাজার ভর্তি ইলিশ।
ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালী ইলিশ মিললেও দাম অনেক বেশি। আড়ৎ থেকে খুচরা বাজার কিংবা টুকরিতে করে পাড়া-মহল্লায় যে মাছ বিক্রি হচ্ছে তাতে দামের পার্থক্য দেড় থেকে দুইশ’ টাকা। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর মাছ বিক্রির হাঁকডাকে আবারও সরগরম হয়ে উঠছে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে। দিনে প্রতিদিন কোটি টাকার মাছ বিক্রি হচ্ছে এ অবতরণকেন্দ্রে।

গত বছরের তুলনায় এ বছর এ অবতরণকেন্দ্রে বেড়েছে ইলিশের সরবরাহ। গত সাত দিনে এ অবতরণকেন্দ্রে প্রায় ১০০ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হয়েছে। যার মধ্যে ৭০ মেট্রিক টন ইলিশ। সমুদ্রে বড় আকৃতির ইলিশ ধরা পড়ায় ভালো দাম পাচ্ছেন জেলেরা। মাছের সরবরাহ ভালো থাকলেও চাহিদা রয়েছে প্রচুর। সরাসরি ঘাট থেকে পদ্মা সেতু হয়ে বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে মাছ। এর কারণেই স্থানীয় বাজারে বেশি দামে ইলিশ কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

ভরা মৌসুমেও ইলিশের চড়া দাম নিয়ে অসন্তুষ্ট ক্রেতারা। ক্রেতাদের অভিযোগ, মাছের সরবরাহ যথেষ্ট হলেও ব্যবসায়ীরা দাম কমাচ্ছেন না। মূলত সিন্ডিকেটের কারণেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। এভাবে চলতে থাকলে ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে ইলিশ মাছের দাম।

জেলেরা জানান, নিষেধাজ্ঞার পরপরই সাগরে ইলিশ ধরা পড়ায় দারুণ খুশি তারা। আর একের পর এক ট্রলার ভিড়ছে ঘাটে। ট্রলারের খোন্দল (ইলিশ সংরক্ষণের কোটর) থেকে ঝাঁপি বোঝাই করে ইলিশ অবতরণ কেন্দ্রে দেখে স্বস্তি ফিরেছে মৎস্য ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গেল বছরের চেয়ে এবার মাছের সরবরাহ বেশি , কিন্তু দাম বেশি। আর এই সময়ে ইলিশের চাহিদাও থাকে বেশি। স্থানীয় বাজারে তুলনায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয় এখান থেকে।

বরগুনা পৌর মাছ বাজারে মাছ কিনতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আরাফাত। তিনি বলেন, এই মৌসুমে ইলিশসহ সামগ্রিক মাছের দাম কম থাকার কথা। কিন্তু এখানে এসে ইলিশে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশের দাম চায় ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম নিচ্ছে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা, একটু ছোট ইলিশের দাম চায় কেজিপ্রতি ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা।

সর্বশেষ ২শ’ গ্রাম ও তার নিচের মাছ বিক্রি হয়েছে সাড়ে চারশো থেকে ৫শ’ টাকা কেজিতে। যা অন্যান্য সময় বিক্রি হত ২শ’ থেকে ৩০০ টাকা কেজি। কীভাবে ইলিশ কিনব।

সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের এমবি বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি মো. রহমান মিয়া বলেন, গতকাল সাগর থেকে এসেছি প্রচুর ইলিশ বোঝাই করে ট্রলারে। সরকারের বিভিন্ন সময় নিষেধাজ্ঞা মানার কারণে এত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। পাঁচ হাজার ইলিশ নিয়ে দ্রুত ঘাটে ফিরেছি। ইলিশের সাইজ তুলনামূলক ভালো। আবার সাগরে যাওয়ার জন্য নতুন করে প্রস্তুতি নিচ্ছি।

মৎস্য ব্যবসায়ী মো. রফিক হোসেন ও শুক্কুর মিয়া বলেন, ‘ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় ইলিশের চাহিদা রয়েছে। তাই জেলেরা অতিরিক্ত দাম হাঁকাচ্ছেন। কিন্তু নিরুপায় হয়ে বেশি দামে ইলিশ কিনতে হচ্ছে। ইলিশ কিনে দ্রুত তা প্যাকেটজাত করে গাড়িতে তুলে দিচ্ছে। এক কেজির বেশি ওজনের ১০০ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ২০ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়, মাঝারি আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায়। ’

মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর জোমাদ্দার বলেন, আমরা জেলেদের কাছ থেকে মাছ কেনার পর অল্প কিছু ব্যবসা রেখেই মাছ বাজারে বিক্রি করি। খুচরা বাজারে গিয়ে মাছের দাম বৃদ্ধি পেলে আমাদের কিছু করার থাকে না।

ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কষ্ট করে নিষেধাজ্ঞা পালন করলেও এখন সুফল ভোগ করছি সবাই মিলে। গত সপ্তাহে সমুদ্র থেকে আসা ট্রলারে প্রচুর ইলিশ ছিল। সমুদ্রে এরকম ইলিশসহ অন্যান্য মাছ পেলে বিগত দিনের সব ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে আমি মনে করি। গত তিন দিন ধরে বৈরি আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল থাকায় সমুদ্রে মাছ শিকার বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে,সহকারী বিপনন কর্মকর্তারা জানান, সমুদ্রের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়বে রাজস্ব আদায়। এ অবতরণকেন্দ্রে বিক্রিত মাছের দামের শতকরা ১.২৫ শতাংশ রাজস্ব আদায় করে সরকার। আমরা বলতে পারছি না এই ভরা মৌসুমে ইলিশের দাম কেন এতো বেশি, এর রহস্য খুঁজে পাচ্ছি না। জেলে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে এর সমাধান খুঁজছি আমরা।

উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে চড়া ইলিশের দাম।