বরিশালটুডে ডেস্ক: এখন শীতকালীন সবজির ভরা মৌসুম। বাজারে সরবরাহও বেশি। সে হিসেবে বাজারে এখন দাম কম থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। একদম ভরা মৌসুমে এত বেশি দাম এর আগে কখনো দেখা যায়নি। গত কয়েক দিনের বাজারে সব ধরনের সবজির দাম আরও বেড়েছে। শুধু পেঁপে আর শালগম ছাড়া ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি নেই বললেই চলে। অন্যান্য সবজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। এ অবস্থায় সবজির দামে অস্বস্তি বিরাজ করছে ক্রেতাদের মাঝে।
এছাড়া পেঁয়াজ ও আলুর দাম বাজারে অস্থিতিশীল রয়েছে। যেখানে বছরের এসময় প্রতি কেজি আলু ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হয়, সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। পেঁয়াজের কেজি কয়েকগুণ বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা।
যদিও সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘরে সবজির কোনো সরবরাহ সংকট চোখে পড়েনি। বরং শীতকালীন সবজির ভরপুর সরবরাহ এখন। প্রতি বছরই এসময়ে বাজারে সবজির সরবরাহ সবচেয়ে বেশি থাকে। সবজির পদেও থাকে নানা বৈচিত্র্য। এরপরও প্রতিদিন সবজির দাম বাড়ছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ২০ টাকার বেশি।
ব্যবসায়ীদের দাবি, দুই সপ্তাহ আগে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের কিছু এলাকায় বৃষ্টিতে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ফলে সরবরাহ কমেছে। এছাড়া উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে বেশি দামে সবজি বিক্রি করছেন চাষিরা। ফলে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মোকামে সবজির দাম বেশি।
পাশাপাশি কয়েকজন ব্যবসায়ী এ-ও বলছেন, হরতাল-অবরোধে ক্ষেত্রবিশেষে বেড়েছে পরিবহন খরচ। এছাড়া এবার আলুর দাম বেশি থাকায় অন্যান্য সবজির দামে তার প্রভাব পড়েছে। সঙ্গে অন্যান্য পণ্যের উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব রয়েছে।
কারওয়ার বাজারে সবজি বিক্রেতা আবু হোসেন বলেন, সবকিছুর দামই বাড়তি, তাহলে কৃষক কেন সবজি কম দামে বিক্রি করবে? সেজন্য মোকামে সবজির দাম বেড়েছে।
আরেক ব্যবসায়ী সুজন মন্ডল বলেন, গত ঘূর্ণিঝড়ে টানা বৃষ্টিতে আলুসহ বেশকিছু সবজি নষ্ট হয়েছে। এছাড়া আগে উত্তরবঙ্গ থেকে যে ট্রাক ১৬ হাজারে আসতো, সেটার ভাড়া এখন ২০ হাজার হয়েছে।
সোমবার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে নতুন ও পুরোনো আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, অথচ এক সপ্তাহ আগেও এই পদের আলুর দাম ছিল ৫০-৬০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি সিম ও টমেটো ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি যাচ্ছে। একটি মাঝারি সাইজের ফুলকপির দাম এখন পড়ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, যা অন্যান্য বছরের এই সময় ২০ থেকে ২৫ টাকায় নেমে আসে।
অন্যদিকে বাজারে প্রতি আটি শাকের দামও ৩০ টাকার নিচে নেই। যদিও বাজারে প্রচুর পালং, মুলাসহ অন্যান্য মৌসুমি শাক রয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, সবজির দামের বিষয় নিয়ে ব্যবসায়ীরাও উদ্বিগ্ন। অন্যান্য বছরের এই সময় সবজির দাম এত বেশি থাকে না, যেটা এবছর দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আসলে এবছর বীজ, সারসহ অন্যান্য খরচ বাড়ায় সবজি উৎপাদনের খরচ অনেক বেড়েছে। যে কারণে চাষিরা কমদামে সবজি বিক্রি করতে চাচ্ছেন না।
‘এছাড়া অবরোধকে হাতিয়ার বানিয়ে অনেক পরিবহনচালক ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়েছেন। তার একটি প্রভাব রয়েছে।’ যোগ করেন তিনি।
এদিকে বাজারে গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে এই পদের বেগুনের দাম ছিল ৬০ টাকা। লাউয়ের দাম বেড়েছে বেশি। ছোট একটি লাউয়ের দাম পড়ছে ৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ টাকার মধ্যে।
রামপুরা বাজারে বিক্রেতা ইউনুছ মিয়া বলেন, দাম বাড়ার ফলে ক্রেতাদের কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে। বেশ অস্বস্তিতে আছি। ক্রেতাদের সঙ্গে শুধু তর্কাতর্কি হচ্ছে। বিক্রিও কমেছে।
মৌসুমের এই সময়ে বাজারে টমেটোর কেজি ৫০ টাকার আশপাশে চলে আসে। এবার সেখানে ৮০ টাকার আশপাশে দাম রাখতে হচ্ছে। ভালো মানের টমেটো ১০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। একজন টমেটো বিক্রেতা বলেন, ভরা মৌসুমে এত দামে কখনো টমেটো বিক্রি হয়নি।
ওই বাজারে একজন ক্রেতা জাইদুল ইসলাম বলেন, তরকারি কেনার মতো অবস্থা নেই। সব জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে। দেখার কেউ নেই। সংকটের কথা বলা হলেও দেখুন বাজারে কী নেই। আসলে সবকিছু ব্যবসায়ীদের মনমতো চলছে।