ইসলামী আন্দোলনের গণমিছিল তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে গণমিছিল করেছে


বরিশালটুডে ডেস্ক: সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে বিএনপির ডাকা পঞ্চম দফা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের আজ প্রথম দিন চলছে।

এর মধ্যেই তফসিলের প্রতিবাদে নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে মিছিল করেছে চরমোনাই পীরের দল হিসাবে পরিচিত ইসলামী আন্দোলন। তফসিল ঘোষণা হলে বৃহস্পতিবার সারা দেশে বিক্ষোভ করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।

ঢাকা ও বিভিন্ন জেলায় খবর নিয়ে জানা যাচ্ছে, বিএনপির পঞ্চম দফা অবরোধে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ থাকলেও শহরগুলোর মধ্যে যানবাহন চলাচল অনেক বেড়েছে। ঢাকার অনেক স্থানে যানজটেরও দেখা মিলেছে।

তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে মিছিল করেছে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলন। চরমোনাই পীরের দল হিসাবে পরিচিত এই সংগঠনটি আগেই ঘোষণা দিয়েছিল, যেদিন তফসিল ঘোষণা করা হবে, সেদিন নির্বাচন কমিশন অভিমুখে তারা গণমিছিল করবে।

বুধবার বেলা তিনটার দিকে ঢাকা বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে সমবেত হয়ে তারা মিছিল শুরু করে।

ঢাকার বায়তুল মোকারকম মসজিদ থেকে মিছিলটি বের হয়ে পল্টন মোড় হয়ে শান্তিনগর পর্যন্ত যাওয়ার পর পুলিশের বাধার মুখে আবার তারা ফিরে যায়। পরে আবার বায়তুূল মোকাররমের সামনে গিয়ে বিকাল সাড়ে চারটা নাগাদ মিছিলটি শেষ হয়ে যায়।

ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র মহাসচিব মোসাদ্দেক বিল্লাহ মাদানি বলেছেন, তফসিল ঘোষণা করা হলে আগামীকাল বিক্ষোভ মিছিল করা হবে।

এসময় ইসলামী আন্দোলনের মিছিলে কয়েক হাজার মানুষকে অংশ নিতে দেখা গেছে।

এর আগে গত ১২ই নভেম্বর ইসলামী আন্দোলন ঘোষণা দিয়েছিল যে, যেদিন তফসিল ঘোষণা করা হবে, সেদিনই তারা নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিল করবে।

ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র ও যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান সেদিন বলেছিলেন, এখনকার সংঘাতময় পরিস্থিতিতে দলগুলোর মধ্যে কোন ধরনের সমঝোতা ছাড়া একতরফা তফসিল দিলে পরিস্থিতি আরও সংঘাতপূর্ণ হবে বলে তারা মনে করেন এবং সেটি তারা চান না।

“এ কারণেই আমরা তফসিল ঘোষণার দিন কর্মসূচি দিয়েছি। অন্য দলগুলোর সঙ্গেও কথাবার্তা হচ্ছে,” বলছিলেন মি. রহমান।

যেভাবে চলছে বিএনপির পঞ্চম দফার অবরোধ চলাকালে ঢাকা থেকে দূর পাল্লার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে ঢাকার মধ্যে সড়কে যান চলাচল বেড়েছে। সকালে স্কুল-অফিস শুরুর সময় কোন কোন সড়কে কিছুটা যানজটও দেখা গেছে।

দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় সবগুলো বিভাগ থেকে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে শহরগুলোর ভেতরে এবং উপজেলাগুলোতে যান চলাচল করছে। তবে কোন বিভাগীয় শহরেই বিএনপির নেতাকর্মীদের খুব একটা তৎপরতা দেখা যায়নি।

ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনালে বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারগুলো পুরোপুরি ফাঁকা ছিল সকালে। যাত্রী না থাকার কারণে সকাল থেকে কোন পরিবহন এখান থেকে ছেড়ে যায়নি। এই বাস টার্মিনালটি থেকে সাধারণত দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর দিকে যান চলাচল করে থাকে।

বিএনপির ডাকা এর আগের কয়েকটি অবরোধের সময় সকালে রাজধানীতে যতো যান চলাচল দেখা গিয়েছিল, আজ তার চেয়ে বেশি পরিমাণ যান রাস্তায় চলছে।

জানাযায়, বুধবার রাস্তায় গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত যান চলাচলও বেড়েছে। রাস্তায় অফিসগামী মানুষ এবং স্কুল শিক্ষার্থীদের বেশ চাপ চোখে পড়েছে।

রাজধানীর রামপুরা, মিরপুর, পান্থপথ, ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, আগারগাঁও, শ্যামলী, তেজগাঁও এবং গুলশান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যান চলাচল স্বাভাবিক দিনের তুলনায় কিছুটা কম।

তবে যাত্রীবাহী বাসের চলাচল বেশ চোখে পড়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রাইভেটকার এবং মাইক্রোবাসও চলাচল করতে দেখা গেছে।

জাহাঙ্গীরগেট, বিজয় সরণী এলাকায় হালকা যানজট চোখে পড়েছে। তবে মহাখালী মোড়ের মতো এলাকাগুলো সকাল ১০টা পর্যন্ত বেশ ফাঁকাই দেখা গেছে।

দূরপাল্লার যান চলাচল মূলত বন্ধ রয়েছে। তবে লঞ্চ ও ট্রেন চলাচল মোটামুটি স্বাভাবিক রয়েছে।

এদিকে, পঞ্চম দফা অবরোধের সমর্থনে রাজধানীর প্রেসক্লাব থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত মিছিল করেছে বিএনপির মহিলা দল। এই মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

এছাড়া যশোর, ময়মনসিংহ, মেহেরপুর, চাঁদপুর ও জামালপুরে অবরোধের সমর্থনে বিএনপির নেতাকর্মীদের মিছিল করার খবর পাওয়া গেছে। সেই সাথে গত রাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে দলটির নেতাকর্মীরা মশাল মিছিল করেছে বলে জানিয়েছে বিএনপির মিডিয়া সেল।

বিএনপির ডাকা পঞ্চম দফার এই অবরোধ বুধবার সকাল ছয়টা থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত চলবে।

এর আগে সোমবার বিএনপির ডাকা চতুর্থ দফা অবরোধ শেষ হওয়ার পর এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বুধবার থেকে পঞ্চম দফার এই সর্বাত্মক অবরোধ ঘোষণা করে দলটি। এর মধ্যে মঙ্গলবার একদিনের বিরতি দেয়া হয়।

গত ২৮শে অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে আসছে বিএনপি।

র‍্যাব জানিয়েছে, গত ২৮শে অক্টোবর ও পরবর্তী সময়ে ঢাকা ও বরিশালের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা ও সহিংসতায় নির্দেশ দেয়ার অভিযোগে বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সভাপতিসহ দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বরিশাল সদর এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।