বরিশালটুডে ডেস্ক: দেশে দৈনিক ডিমের চাহিদা সাড়ে তিন থেকে চার কোটি পিস। উৎপাদন হয় ছয় কোটি পিসের বেশি। সংকট না থাকলেও আকাশ ছুঁয়েছে ডিমের দাম। বর্তমানে প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।
সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির হিসাবে গত ৪ আগস্টের পর ৯ দিনেই খুচরা পর্যায়ে প্রতি হালি ডিমের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। ডিমের বাজারে নৈরাজ্য দূর করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বাজারে অভিযান শুরু করলেও পড়েনি তার প্রভাব। ডিম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকেও আসেনি সমাধান।
টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) কাছে থাকা ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ডিমের দামের গ্রাফ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত পাঁচ বছর আট মাসের মধ্যে ডিমের সর্বোচ্চ দাম উঠেছে চলতি আগস্টে। প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর ডিমের সর্বোচ্চ দাম ওঠে ডিসেম্বরে প্রতি হালি ৪৫ টাকা। ২০১৮ সালের মার্চে ২২ টাকায় নামে। ওই বছর অক্টোবরে সর্বোচ্চ দাম ওঠে হালি ৩৫ টাকা। ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ দাম ছিল ৩৮ টাকা হালি।
২০২০ সালে সর্বোচ্চ দাম ওঠে ৩৭ টাকা। ২০২১ সালে সর্বোচ্চ দাম ছিল ৩৮ টাকা। এরপরে ৩২ টাকায় নামে। ২০২২ সালের আগস্টে এসে এক লাফে ডিমের হালি ৫০ টাকায় ওঠে। মাসের ব্যবধানে বাড়ে ১২ টাকা। চলতি বছরের আগস্টে সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে ডিমের দাম। হালি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। রাজধানীর একাধিক পুরনো মুদি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এর আগে তারা কখনো ৫৫ টাকা হালিতে ডিম বিক্রি করেননি।
এদিকে বাংলাদেশ ডিম উৎপাদক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশের চাহিদা মেটাতে বছরে প্রয়োজন সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪৬০ কোটি পিস ডিম। অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরে দেশে ২ হাজার ৩৩৭ কোটি পিস ডিম উৎপাদিত হয়েছিল। তার আগের অর্থবছরে উৎপাদন হয় ২ হাজার ৩৩৫ কোটি পিস। চলতি বছরে দেশের খামারে কোনো রোগ-বালাই বা মড়ক লাগার খবর নেই। তাই ডিমের উৎপাদন কমার আশঙ্কা নেই। তারপরও ডিমের দাম বাড়ছে।
ডিমের দাম বৃদ্ধির জন্য গত কয়েকদিন ধরেই করপোরেট সিন্ডিকেটকে দায়ী করে আসছে ক্ষুদ্র খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। সংগঠনটির সভাপতি সুমন হাওলাদার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সিন্ডিকেট করে ডিমের দাম বাড়াচ্ছে। খামারিদের থেকে কম দামে ডিম কিনে সরবরাহ সংকট সৃষ্টি করে বেশি দামে বিক্রি করছে। অথচ, সরকার তাদেরকে নিয়েই বৈঠক করছে। তাদের ভ্যাট মওকুপ করছে। ক্ষুদ্র খামারিদের মতামত নেওয়া হচ্ছে না। গতকালও মন্ত্রণালয়ে ডিম নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানেও করপোরেট ব্যবসায়ীদের ডাকা হয়েছে, আমাদের জানানোও হয়নি। অথচ, দেশের ৮০ ভাগ ডিম ক্ষুদ্র খামারিরা উৎপাদন করে।
এসময় তিনি আরও বলেন, ভোক্তা অধিদফতর গত দুই দিন অভিযান না চালালে প্রতি পিস ডিমের দাম ১৮ টাকা হয়ে যেত। ডিমের বাজারে অরাজক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় চাইলে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। তবে একই দিনে সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এক সভা শেষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, দেশে যে উৎপাদন আছে, তাতে ডিম আমদানির প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সার্ভে অনুযায়ী, একটি ডিম উৎপাদনে সাড়ে ১০ টাকার ওপর খরচ পড়ে। অন্যান্য কিছু বিষয় আছে। সেখানে খুচরা পর্যায়ে একটি ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারিত হলেই প্রচুর লাভ করা সম্ভব। আমরা উৎপাদনকারীদের বিভিন্নভাবে অনুরোধ করেছি, বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এরপরেও যদি কেউ জনদুর্ভোগ ডেকে আনেন, তা দেখভাল করার জন্য ভোক্তা অধিকার আইন আছে। ভোক্তাদের অধিকার দেখার জন্য কর্তৃপক্ষ আছে। তারা প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেবেন।
ডিমের বাজারে অরাজকতা প্রতিরোধে গত বৃহস্পতিবার থেকে বাজার অভিযানে নেমেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। গতকালও দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ডিমের দামে কারসাজি করা, ডিমের ক্রয়-বিক্রয় রশিদ না থাকা, মূল্য তালিকা যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করার অপরাধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে সরকারি সংস্থাটি। তবে বাজারে অভিযানের কোনো প্রভাব গতকাল দেখা যায়নি।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রতি হালি ডিম ৬০ টাকায়, ডজন ১৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। খিলক্ষেত, বাড্ডা, রামপুরার বিভিন্ন খুচরা দোকানে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছিল ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকায়। এ ব্যাপারে কারওয়ান বাজারের পুরনো ডিম ব্যবসায়ীরা বলেন, ভোক্তা অধিদফতর বাজারে অভিযান চালাচ্ছে। অথচ, এখানে আড়তদার, পাইকারি বা খুচরা ব্যবসায়ীদের কিছু করার নেই। বড় বড় ব্যবসায়ীরা খামারিদের থেকে ডিম নিয়ে বেশি দামে বাজারে ছাড়ছে। তারা পাকা রশিদ দিচ্ছে না। তাদের কথায় রাজি না হলে ডিম দিচ্ছে না।