স্টাফ রিপোর্টার : দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে গর্ভবতী এক নারীর পেটে লাথি মেরে গর্ভের সন্তান হত্যা করেছে এমন অভিযোগে আদালতে দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামি রুবেল শরীফ (৪০) ওরফে নাক কাটা রুবেল কে গ্রেফতার করেছেন বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ। শনিবার (৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০ টায় নগরীর ১৪ নং ওয়ার্ডস্থ খালেদাবাদ কলোনী থেকে তাকে গ্রেফতার করেন ওই থানার এসআই আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন- গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন- নানা অপরাধের সাথে জড়িত রুবেল শরীফ (৪০) ওরফে নাক কাটা রুবেল। গর্ভবতী এক নারীর পেটে লাথি মেরে গর্ভের সন্তান হত্যা করেছে।
চলতি বছরের ৩০ জুন বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছিলেন খালেদাবাদ কলোনীর বাসিন্দা মো. লাডলা’র মেয়ে সিম্মী (২৩)। দায়েরকৃত মামলার আসামিরা হলেন- একই এলাকার মৃত. আলতাফ শরীফের ছেলে রুবেল শরীফ ওরফে নাক কাটা রুবেল ও তার ভাই রাজন (৪২), ভুলু মিয়ার ছেলে হৃদয় (২৫), ছান্না মিয়ার ছেলে ছানি (২৬) ও আ. রহিমের ছেলে আছিব (১৮)।
মামলার বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে- বাদীর বোন ১নং স্বাক্ষী শিউলি (৩০) এর স্বামী সোহাগ কাজী পেশায় একজন ফার্নিচার ব্যবসায়ী। তার কাছে আসামিরা ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে আসছে। চলতি বছরের ৩ এপ্রিল রাত ৯ টার সময় ওই কলোনীর সামনে থাকা রুবেলের মুদির দোকানের সামনে বসে আসামিরা সোহাগ কাজীর কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করলে সোহাগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় আসামিরা ফার্নিচার ব্যবসায়ী সোহাগ কাজী কে বেদম মারধর করে। এমনটা শুনতে পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে সোহাগের গর্ভবতী স্ত্রী শিউলি। এ সময় ১নং আসামি রুবেল শরীফ ওরফে নাক কাটা রুবেল গর্ভবতী শিউলির পেটে লাথি দেয়। প্রথমে আহত শিউলি বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হলেও পরবর্তীতে কর্মরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা প্রেরণ করলে তাকে (শিউলি) আলট্রাসোনোগ্রাম পরীক্ষা দেন এবং রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক জানায়- গর্ভের শিশু মাথায় প্রচন্ড আঘাত লাগার কারণে মারা গেছেন। পরে সিজারিয়ান ডেলিভারি করে শিউলির মৃত সন্তান বের করা হয়।
জানা গেছে, রুবেল শরীফ ওরফে নাক কাটা রুবেল ও তার আবুল বাসার ওরফে রাজন। এ দুই জন হলেন- পটুয়াখালী দুমকি উপজেলার পূর্ব কার্তিকপাশা গ্রামের মৃত. আলতাফ শরীফের ছেলে। ডাকাতি সহ এলাকায় নানা অপকর্মে অভিযুক্ত থাকায় এলাকাবাসী নাক কাটা রুবেলের এক পা ভেঙ্গে দিয়েছিল। তারপর এলাকা ছেড়ে বরিশার নগরীর বাংলাবাজার ‘শহীদ আলতাফ স্কুল’ সংলগ্ন এলাকায় এসে বসবাস শুরু করে নানা অপরাধমূলক কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় নাক কাটা রুবেলের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। ২০১৩ সালের ১০ জুন দায়েরকৃত ৮ নং , ২০২৩ সালের ৫ জুন দায়েরকৃত ৯ নং ও ২০০৯ সালের ১৬ অক্টোবর দায়েরকৃত ৫১ নং মামলার আসামি রুবেল। নাক কাটা রুবেলের ভাই রাজনের বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক মামলা। ২০২৩ সালের ৫ জুন দায়েরকৃত ৯ নং ও ২০২৪ সালের ২৩ মার্চ দায়েরকৃত ৬০ নং মামলার আসামি রাজন।
চলতি বছরের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে একাধিক পত্রিকায় ‘বরিশাল নগরীর তিন ওয়ার্ড বাসিন্দাদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক এক ডজন অপরাধী’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদে রুবেল ও তার ভাই রাজন সহ পুরো বাহিনীর অপকর্মগুলো তুলে ধরা হয়।