বরিশালটুডে ডেস্ক: মা ইলিশ রক্ষায় আজ বুধবার মধ্যরাত থেকে টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে। প্রজনন নিরাপদ করতে আশ্বিন মাসে অমাবস্যা ও পূর্ণিমা মাঝে রেখে প্রতিবছর এই বিধিনিষেধ জারি করে মৎস্য অধিদপ্তর। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ নিধন করায় এ বছর নদ-নদীর ৩২টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে অধিদপ্তরটি। এর মধ্যে ইলিশের বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা সংলগ্ন মেঘনার সাতটি পয়েন্ট অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বাড়তি নজরদারি শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জানা গেছে, বিগত কয়েক বছর ধরে এই পয়েন্টগুলোতে নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বাধা দিতে গেলে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জেলেদের হামলার মুখে পড়তে হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গুলি বর্ষণও করতে হয়েছে। এ কারণে এ বছর এসব এলাকায় বিশেষ নজর রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী স ম রেজাউল করিম।
জানতে চাইলে বরিশালের মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ৮০ ভাগ ইলিশের পেটে ডিম আসে আশ্বিন মাসে। ইলিশ শুধুমাত্র মিঠাপানিতে ডিম ছাড়ে। তাই এ মাসে ডিম ছাড়ার জন্য ইলিশ সাগরের নোনা ছেড়ে মিঠাপানির নদীমুখী হয়। পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সবচেয়ে ইলিশের ঝাঁক নদীতে চলে আসে। তাই মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করার জন্য প্রতি বছর আশ্বিনে পূর্ণিমা ও অমাবস্যা মাঝে রেখে ২২ দিন ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ বছর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত নদ নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণ বন্ধ থাকবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ অক্টোবর রাজধানীতে মৎস্য অধিদপ্তরে এ সংক্রান্ত সভায় ইলিশ বিচরণে নদ-নদীর ৩২টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিগত কয়েক বছর এই পয়েন্টগুলোতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার প্রবণতা ছিল খুব বেশি। তার মধ্যে বরিশালে মেঘনা ও তার শাখা নদীর ৭টি পয়েন্ট অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
বরিশাল বিভাগসহ দেশের উপকূলীয় এলাকার এ ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলো হলো—বরিশালের হিজলা উপজেলার হরিণাথপুর ইউনিয়নের আসলি-আবুপুর, হিজলা-গৌরবদী ইউনিয়নের ওরাকুল মাছঘাট, খালিসপুর-জানপুর, মেহেন্দিগঞ্জের গজারিয়া ও কালাবদর নদীর বাগরজা এলাকা, মেঘনার গোবিন্দপুর, বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়ন সংলগ্ন ঝুনাহার মোড় এবং মুলাদীর আড়িয়াল খাঁ নদী, চাঁদপুর সদরের রাজরাজেস্বর, লক্ষীপুর ইউনিয়নের বহরিয়া, হাইমচরের সাহেবগঞ্জ, উত্তর মতলবপুরের বোরোরচর, লক্ষীপুর ইউনিয়নের রায়পুর উপজেলার চরবংশি ইউনিয়নের নামারঘাট, চান্দারখাল, কমলনগর উপজেলার লুধুয়া মাছঘাট, শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পদ্মা নদীর লেকুবেপারীর ঘাট, সুরেশ্বর বাংলাবাজার খালের মুখ, ইশ্বরকাঠী খালেরমুখ, মোক্তারের চর, খাসবাজার, বাবুরচর, জাজিরা উপজেলার পাইনপাড়া, মাঝিরঘাট, পূর্বনা, ডোবা, বাবুরচর, কুন্ডেরচর, ছিডারচর, শফিককাজীর মোড়, গোসাইহাট উপজেলার বাংলাবাজার খাল, জৈয়ন্তি নদী, কুচাইপট্টি ইউনিয়ন সংলগ্ন মেঘনা বিষকাঠালিয়া-মেঘনার অববাহিকা, ঠান্ডারবাজার ও টেকপাড় মৎস্য আড়ত সংলগ্ন খাল, গোসাইরহাট-হাইমচর-চাঁদপুর সীমানার মেঘনার ৬০০ মিটার, ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মা নদীর কাঁচিকাটা, দেওয়ানগঞ্জ ও মোল্লা বাজার।
মেঘনা ঘেরা মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত ২০ জন ফোর্স দেওয়া হয়েছে। নৌ-বাহিনী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সার্বক্ষণিক টহলে থাকবে। তিনি এ পর্যন্ত ১৬টি সচেতনতা সভা করেছেন। জনপ্রতিনিধিদের সচেতন করতে স্থানীয় এমপি বৃহস্পতিবার মেহেন্দীগঞ্জেএকাধিক সভা করবেন। একই কথা জানিয়েছেন হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এম এম পারভেজ।
মৎস্যজীবীদের তথ্য মতে, নিষেধাজ্ঞাকালীন স্থানীয় প্রভাবশালী মাছ ব্যবসায়ীরা অসাধু মাঠ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে মা ইলিশ নিধন করে। গত কয়েক বছর নিষেধাজ্ঞার শুরুতেই নদী প্রভাবশালীদের জেলেদের দখলে চলে যায়। নদী তীরবর্তী জনপদের অধিকাংশ চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য নিষেধাজ্ঞাকালীন মা ইলিশ শিকারের সঙ্গে জড়িত। জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির যুগ্ম মহাসচিব হিজলার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন মাতুব্বর বলেন, মা ইলিশ নিধন বন্ধ করতে হলে নদীর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্থায়ী ক্যাম্প করতে হবে।
এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে এবার যৌথবাহিনীর টহল বজায় থাকবে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তালিকা আমরা ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রত্যেক উপজেলা ও জেলায় একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। ইতিমধ্যে ৩২ জন কর্মকর্তাকে বরিশালে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।