গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা হাইকোর্টের


অনলাইন ডেস্ক: মায়ের গর্ভে থাকা শিশুর লিঙ্গ শনাক্ত ও পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় রোধে নীতিমালা বা নির্দেশনা তৈরি করতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে জারি রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ রায় দেন আদালত।

রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান। অন্যদিকে, রাষ্ট্র পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত।

গণমাধ্যমকে রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত এক রিটের রুল নিষ্পত্তি করে এবং বিষয়টিকে চলমান বিচার্য বিষয় (কন্টিনিউয়াস ম্যান্ডামাস) রেখে এ রায় ঘোষণা করেছেন উচ্চ আদালত।

এর আগে গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় রোধে নীতিমালা বা নির্দেশনা তৈরি করতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণে নীতিমালা তৈরি করতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে জারি করা রুলের শুনানির দিন ধার্য করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট একই বেঞ্চে চূড়ান্ত শুনানির জন্য ঠিক করা হয়েছে।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা নতুন নীতিমালা আদালতে উপস্থাপন করার পর অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) পক্ষে আজ শুনানি করেন অ্যাডভোকেট তীর্থ সলিল পাল। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত।

এদিকে, গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় শনাক্ত রোধে নতুন নীতিমালা তৈরি করেছে সরকার। সম্প্রতি এটি হলফনামা করে হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়েছে। এমন তথ্য জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।

তিনি বলেন, মাতৃগর্ভের সন্তানের পরিচয় প্রকাশ নিয়ে নতুন নীতিমালা করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মাতৃগর্ভের শিশুর পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না, এমন নীতিমালা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এর আগে ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান এ বিষয়ে রিট আবেদন করেছিলেন। একই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুল জারি করেন।

রুলে গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় রোধে নীতিমালা বা নির্দেশনা তৈরি করতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণে নীতিমালা তৈরি করতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা রুলে জানতে চান হাইকোর্ট।

স্বাস্থ্য সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক সচিব, সমাজকল্যাণ সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সাত বিবাদীকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

ওই সময় রিটকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান জানিয়েছিলেন, ভারতে আইন করে গর্ভজাত সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গর্ভের শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ করা হলে প্রসূতি মায়ের মানসিক চাপ তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক চাপে গর্ভপাত করার ঘটনাও ঘটে।

এরপর ইএনএফপিএ, সরকারি ও বেসরকারিসহ সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে এ নীতিমালা তৈরি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ন্যাশনাল গাইডলাইন ফর প্রিভেনশন অব সন প্রিফারেন্স অ্যান্ড দ্য রিস্ক অব জেন্ডার বায়সড সেক্স সিলেকশন’।

এ নীতিমালা বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, নার্সিং ও মিডওয়াইফেরি অধিদপ্তর। আর বাস্তবায়নের জন্য অংশীদার হিসেবে রাখা হয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে।

ইশরাত হাসান জানান, গর্ভের সন্তানের পরিচয় প্রকাশ না করার বিষয়টি একেবারে কোনো প্রকার আপত্তি ছাড়াই মেনে নিয়েছে। এটা জানার অধিকার কারও নেই। কারণ এতে মা মানসিক চাপের শিকার হতে পারেন। এতে মা ও অনাগত সন্তান উভয়েরই ক্ষতি হতে পারে।

তিনি বলেন, এটা বাস্তবায়ন হলে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে যেমন গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে তা ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে জানতে পারে না, তেমনি এ বিষয়টা জানানো বন্ধ হয়ে যাবে যে মাতৃগর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে। যার ফলে আমরা একটা সুস্থ সন্তান পাবো।