রবিউল ইসলাম রবি : বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ খালপাড় লাগোয়া সেন্টার পয়েন্ট মার্কেটে ভুয়া সমন্বয় ও সেনাবাহিনী পরিচয়ে সন্ত্রাসী হামলাসহ লুটপাটের ঘটনায় বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক নূরুন নাজনীন মামলা আমলে নিয়ে বরিশাল বিমান বন্দর থানার ওসিকে এফআইআর এর নির্দেশ দেন। চলতি মাসের ৪ জুন আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন বরিশাল বিমানবন্দর থানার অন্তর্ভুক্ত পূর্ব পাংশা গ্রামের মো. শাহজান হাওলাদারের ছেলে আক্তার হোসেন খোকা। এ পর্যন্ত কোনো আসামি ধরতে পারেনি বরিশাল বিমান বন্দর থানা পুলিশ।
দায়েরকৃত মামলার নামধারী আসামি হলেন- মামলায় বরিশাল মহানগর ছাত্রদল নেতা রাসেল আকন, সমন্বয়ক পরিচয়দানকারী শাওন, নথুল্লাবাদ এলাকার আলাউদ্দিন আলাল, ওয়েস্টার্ন ফার্মেসির মালিক আবদুস সালাম সহ অজ্ঞাত ২০/২৫ জন।
চলতি বছরের ৩০ মে রাতে নথুল্লাবাদ ওই সেন্টার পয়েন্ট মার্কেটে হামলা চালিয়ে বাদী সহ ৪ জনকে পিটিয়ে কুপিয়ে জখম করে। ঘটনার পরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বরিশাল বিমান বন্দর থানা পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর একটি টিম।
বরিশাল বিমান বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির সিকদার বলেন- আদালতের নির্দেশ পাওয়া মাত্রই মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে দেয়া হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিমান বন্দর থানার এসআই আল আমিন বলেন- ১৭ জুন মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি এবং তদন্তের কাজও শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে গ্রেফতার অভিযান চলমান রয়েছে।
স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ী বলেছেন- আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলের সিটি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করলেই ঘটনার মূল রহস্য বেড়িয়ে আসবে। আর দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর পরিচয়ে এমন ঘটনা ঘটলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা।
হামলায় গুরুতর আহত ও মামলার বাদি আকতার কোনো খোকা বলেন- সেনাবাহিনীর পরিচয়ে হামলা ও লুটপাটে অংশ নেওয়া যুবকের পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম মাহাদী হাসান সাইমুন। তার নগরীর পশ্চিম কাউনিয়া হাজেরা খাতুন স্কুল সংলগ্ন সাইমুন সাউন্ড সিস্টেম এন্ড লাইটিং এর দোকান রয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্টভাবে মাহাদী হাসান সাইমুনকে হামলায় অংশ নিতে দেখা গেছে।
তিনি আরো বলেন- সমন্বয়ক পরিচয়দাকারী শাওন ৫ আগস্টের পর সমন্বয়ক পরিচয়ে নগরীতে নানা অপকর্ম করে আসছে। আর বিতর্কিত ছাত্রদল নেতা রাসেল আকন মিলে সেনাবাহিনীর ভুয়া পরিচয় দিয়ে এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রথমে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও তখন আমলে নেয়নি। পরে আদালতের শরণাপন্ন হই। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কালক্ষেপণ সহ পুলিশ রহস্যজনক ভূমিকায় অবস্থান করেছে।
সেন্টার পয়েন্ট মার্কেটের স্বত্বাধিকারী ইস্তাফিজুর রহমান মুন্না বলেন, থানা পুলিশ আদালতের আদেশের কপি ৬ জুন রিসিভ করেছেন। আর ঘটনার দিন হামলাকারীদের হামলায় বাদী সহ আহত হয়েছিলেন- নগরীর ২৩ নং ওয়ার্ড দরগাবাড়ি এলাকার মো. অলিউল ইসলামের পুত্র ব্যবসায়ী মাসুদ (৫৪), নথুল্লাবাদ শের-ই-বাংলা সড়ক এলাকার বাসিন্দা মৃত. আ. সত্তার খানের পুত্র প্রবাসী জিন্না খান (৫২) ও এম. এ কামাল হাওলাদারের পুত্র ব্যবসায়ী জুয়েল হাওলাদার (৪৮)।
শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহতরা বলেছিল- হঠাৎ একদল যুবক সমন্বয়ক ও সেনাবাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে একদল অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। হামলাকারীরা এ সময় একটি মোটরসাইকেল সহ অফিসে থাকা নগদ টাকা, কাগজপত্র, মানিব্যাগ ও গুরুত্বপূর্ণ মালামাল নিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট বরিশাল মহানগর ছাত্রদল নেতা রাসেল আকন কে ইয়াবাসহ আটক করে র্যাব-৮ এর একটি টিম। গত বছর ২২ ডিসেম্বর রাতে বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়া এলাকায় ডিবি পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে স্থানীয় জনতা গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছিল রাসেলকে।