বরিশালটুডে ডেস্ক: দেশের মানুষ এক বাক্যে শেখ হাসিনার পতন চায়, এই সরকারের পতন চায়। তারা সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চায়। আমরা একটি মুক্ত, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই। যেখানে সবার অধিকার নিশ্চিত হবে।
রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আরাফাত রহমান কোকোর ৫৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরির জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। যেখানে সবার সমান সুযোগ থাকবে। মানুষ তার মেধার বিকাশ ঘটাতে পারবে। সেখানে আজ কিছু সংখ্যক মানুষের হাতে রাষ্ট্র দখল হয়ে গেছে। যারা এই রাষ্ট্রকে নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তি বিবেচনা করছে। এজন্য তারা সমস্ত ক্ষেত্রগুলোকে দখল করে নিয়েছে। গণতন্ত্র ছাড়া কখনো এগুলো ঠিক হবে না। অর্থাৎ, কোনো ফ্যাসিস্টের হাতে কখনো কোনো দেশের মঙ্গল হয় না, ধ্বংস হওয়া ছাড়া। কথায় আছে, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। সেই বাতাসে নড়তে শুরু করেছে। এখন সারা দেশের মানুষ জেগে উঠেছে।
দেশের মানুষ এক বাক্যে শেখ হাসিনার পতন চায়, এই সরকারের পতন চায়। তারা সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চায়। আমরা একটি মুক্ত, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই। যেখানে সবার অধিকার নিশ্চিত হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন বাংলাদেশের নির্বাচন নাকি এখন দেশে নেই, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলে গেছে। প্রধানমন্ত্রী আবার বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে বাইরের কোনো শক্তি নেই। এসব কথা বলার উদ্দেশ্য, তারা (সরকার) কত ভয় পেয়েছে, কত সন্ত্রস্ত হয়ে গেছে যে, আজ সব জায়গা থেকে বলা হচ্ছে, তোমাকে (শেখ হাসিনা) সুন্দর, সঠিক নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। সেই কারণে তারা এসব কথা বলতে শুরু করেছে। বিএনপি মানুষের শক্তিতে বিশ্বাস করে। বিএনপির গণতান্ত্রিক রাজনীতি আজ আন্তর্জাতিক বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে। ডব্লিউএইচও বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিততে হাই অ্যালার্ট জারি করেছে। মানে সবচেয়ে উঁচু একটি সতর্কবার্তা দিয়েছে।
প্রতিদিন ১০-১৪ জন করে মারা যাচ্ছে। কিন্তু সরকারের কথা শুনে একবারও মনে হয় না, এ বিষয়ে তাদের উদ্বেগ আছে। জেলখানায় আমরা যেভাবে সারি করে শুয়ে থাকি, তেমনি মুগদা হাসপাতালের মেঝেতে শিশুরা শুয়ে আছে। সেখানে তাদের চিকিৎসা হচ্ছে। এত উন্নয়ন, মেগা প্রজেক্ট, তারপরও কেনো বাচ্চারা সঠিক চিকিৎসা পাবে না? কারণ একটাই, শেখ হাসিনার সরকারের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই।
মির্জা ফখরুল বলেন, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার একটি বাড়িতে হঠাৎ করে জঙ্গিবিরোধী অভিযান হয়েছে। সেখান থেকে ছয়জন মহিলা, চারজন শিশু ও চারজন পুরুষকে গ্রেপ্তার করেছে। সঙ্গে নাকি তিন কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে। হঠাৎ এগুলো কই থেকে এলো? কারা আনল? কীভাবে আনল? যখন আন্দোলন ঊর্ধ্বে থাকে তখন জঙ্গি নাটক অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেকবার, প্রতিটি ক্ষেত্রে এটি হয়। এখন দেখবেন, জঙ্গির কথা বলে মানুষকে ডাইভার্ট করবে। তাদের দৃষ্টি সরিয়ে নেবে।
পশ্চিমা বিশ্বকে আবার জুজুর ভয় দেখাবে। বলবে, এই দেখো, বাংলাদেশে আমরা যদি না থাকি, তাহলে জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এভাবে নাটক করতে করতে তারা (আওয়ামী লীগ) এই জায়গায় এসেছে।
আরাফাত রহমান কোকোর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আরাফাত রহমান কোকোর পরিচয়টি একটু ভিন্নরকম। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য যিনি সবচেয়ে বেশি সংগ্রাম করেছেন এবং এখনো করে চলেছেন, সেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র। এটা না হয়ে, তিনি যদি শুধু আরাফাত রহমান কোকো হতেন, তাহলে তার প্রতি অবিচারটা কম হতো। তার প্রতি যে অবিচার হয়েছে এবং তিনি যেভাবে চলে গেছেন এর একমাত্র কারণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই জাতির দুর্ভাগ্য, আমরা আমাদের বরেণ্য সন্তানদের সম্মান করতে জানি না। যার যেখানে যেমন অবদান আছে তার কৃতিত্ব দিতে চাই না। আমাদের এখানে এমন একটি কালচার তৈরি হয়েছে, যেখানে সব সময় একটি টিপিক্যাল রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়। যার ফলে অনেক যোগ্য মানুষ তাদের পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়। আরাফাত রহমান কোকো তেমন একজন ক্রীড়া সংগঠক, যাকে তারা প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে করুণ মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। তিনি তার মৃত্যুর সময় সঠিক চিকিৎসাটুকুও পাননি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ জানিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর যেকোনো সভ্য দেশে সরকার নিজে উদ্যোগ নিয়ে বিদেশে পাঠাত। কারণ ডাক্তাররা বারবার বলছে, তার চিকিৎসা এখানে আর সম্ভব নয়। তার যে চিকিৎসা প্রয়োজন সেটা উন্নত দেশে, উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে করতে হবে। এরা (সরকার) এমন একটি প্রতিহিংসার জায়গায় চলে গেছে যে, এরা মনে প্রাণে প্রতি মুহূর্তে চায় বেগম জিয়া মরে যাক। দেশের আত্মাটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম, বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব শহীদুজ্জামান শহীদ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলমসহ অন্যান নেতৃবিন্দ।