শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে নৌকায় ভোট দিতে হবে: আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

বরিশালটুডে ডেস্ক: জাতীয় পার্টি-জেপি’র চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি বলেছেন, ‌এখন আমাদের রাজনীতি হচ্ছে—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে যে উন্নয়নের ধারা বহমান তা আরও বেগবান করা। স্বাধীনতার পূর্বের ও পরের রাজনীতি হচ্ছে ভিন্ন ধারার। দেশ গঠনের রাজনীতিকে সংহত করতে এখন আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করার জন্য এবারের নির্বাচনে হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দী-বঙ্গবন্ধু-শেখ হাসিনার মার্কা নৌকায় ভোট দিতে হবে।

মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) পিরোজপুরের নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিতসভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদানকালে এসব কথা বলেন নৌকা প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি।

তিনি আরও বলেন, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় আমরা যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পাদন করতে সক্ষম হয়েছি, তার জন্য মানুষ আমাদের নাম জানে। শেখ হাসিনা তার ২০ বছরের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দায়িত্ব পালন করে এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। আমরা শেখ হাসিনার সরকারের মন্ত্রী সভায় বিভিন্ন সময় মন্ত্রী হিসেবে নিয়োজিত থেকে তার উন্নয়নের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত থাকার সৌভাগ্য অর্জন করেছি।

সাত বছরেরও বেশি সময় এরশাদ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৮ বছরের মন্ত্রীত্ব ও সাত বার সংসদ সদস্য থাকার সুবাদে বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ উন্নয়ন, পরিবেশ-বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীত্বকালে অনেক কাজ করেছি। নদী ভাঙনরোধসহ উপকূল অঞ্চলের বেড়িবাঁধ নির্মাণে ভূমিকা রেখেছি।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন জাদুকর মন্তব্য করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, তা সকলে মিলে বাস্তবায়ন করতে হবে। মানুষের অবস্থার পরিবর্তন করতে ঐক্যবদ্ধ থেকে উন্নয়ন করতে হবে। আমরা দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে বলে আসছি উন্নয়ন করতে হলে ঐক্যের দরকার। ঐক্যবদ্ধ থাকলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব হয়।

বিভাজনের বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে এমপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনে যুগান্তকারী অবদান রেখে বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে সমর্থন দিয়েছি। এর জন্য দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছিল।

তিনিও আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছি। জয় বাংলা স্লোগান আমরাই প্রথম তার নির্দেশে দিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করে স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে ভূমিকা রাখার আমাদের সুযোগ হয়েছে। সাংবাদিক হিসেবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলাম। আজ এই স্বাধীন দেশের জন্য যদি যৎসামান্য অবদান রাখতে সক্ষম হই, তাহলে নিজেকে ধন্য মনে করবো। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে বৈষম্য ও বিভাজনের রাজনীতির বিপক্ষে কথা বলে ঐক্যের রাজনীতিকে বেগবান রাখতে সচেষ্ট ছিলাম।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-২ আসনে (কাউখালী-ভাণ্ডারিয়া-নেছারাবাদ) ১৪-দলীয় জোট প্রার্থী জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আরও বলেন, আমি নিজের জন্য ভোট চাই না। আমি নৌকার জন্য ভোট চাই। সর্বোপরি স্বাধীনতার প্রতীক নৌকার মূল কাণ্ডারী শেখ হাসিনা। নৌকায় ভোট দিলে, সেই ভোট জননেত্রী শেখ হাসিনা পাবেন। তিনি ক্ষমতায় যাবেন। শেখ হাসিনা পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হবেন। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকলে ব্রিজ হবে, সড়ক হবে; দেশের সর্বাত্মক উন্নয়ন হবে। সুতরাং আপনাদেরকে বুঝে-শুনে কাজ করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এরশাদ সরকারের আমলে স্বরূপকাঠি কলেজকে জাতীয়করণে আমরা অবদান রেখেছি। ২০০৮ সালে আমি যখন আমেরিকায় ছিলাম, তখন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা স্বরূপকাঠিতে কাকে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন দেবেন—তার জন্য আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি তখন প্রধানমন্ত্রীকে অধ্যক্ষ মো. শাহ আলমকে সংসদ সদস্য প্রার্থী করার জন্য বলেছিলাম এবং তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। আজকের এই সভায় উপস্থিত মো. শাহ আলম সে কথা জানেন।

স্বরূপকাঠি সংবাদদাতা হালিমুর রহমান শাহীন ও ভাণ্ডারিয়া সংবাদদাতা শঙ্কর জিৎ সমদ্দার জানান, স্থানীয় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চত্বরে স্বরূপকাঠি উপজেলা আওয়ামী লীগের এ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। বর্ধিত সভা এক সময় বিরাট জন-সমাবেশে রূপ নেয়। উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সৈয়দ সহিদ উল আহসানের সভাপতিত্বে এ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কানাই লাল বিশ্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. শাহ আলম, জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি মোস্তফা কামাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম ফুয়াদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যাপক শওকত আকবর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যাপক কাজি সাইফুদ্দিন তৈমুর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিরা রানী চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রনি দত্ত জয়।

এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা কাজী সাখাওয়াত হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজু আহমেদ, সারেংকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান উপাধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আলফাজ উদ্দিন, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ মো. শাহীন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহ মো. নাসির উদ্দিন, জলাবাড়ি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আশীষ বড়াল, উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি খন্দকার লাভলী আহমেদ, বলদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শফিকুল আলম সিদ্দিক, দৈহারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শংকর মণ্ডল ও ভাণ্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিক মান্নান প্রমুখ।

সভা উপস্থাপনা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সালাম। এসময় মঞ্চে ছিলেন জাতীয় পার্টি-জেপি’র কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ভাণ্ডারিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাহিবুল হোসেন মাহিম, স্বরূপকাঠি উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব, ভাণ্ডারিয়া উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আসমা আক্তার, ভাণ্ডারিয়া উপজেলা জেপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম খোকন সিকদার, ভাণ্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক কাজী রোকনুজ্জামান বশির প্রমুখ।

জাতীয় পার্টি-জেপি’র চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু মঙ্গলবার বিকালে নেছারাবাদের শর্ষিণা দরবার শরীফে যান। সেখানে তিনি শর্ষিণা দরবার শরীফের গদিনশিন পীর হযরত মাওলানা শাহ মহিবুল্লাহের সঙ্গে দেখা করেন এবং কুশল বিনিময় করেন। এসময় পীর সাহেব তার জন্য দোয়া করেন। পরে তিনি শর্ষিণার মরহুম পীর হযরত মাওলানা নেছার উদ্দিন (রহ.), মরহুম পীর হযরত শাহ আবু জাফর (রহ.) প্রমুখের কবর জিয়ারত এবং দোয়া-মোনাজাত করেন।

এসময় জাতীয় পার্টি-জেপি’র কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ভাণ্ডারিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাহিবুল হোসেন মাহিম, নেছারাবাদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ সহিদ আহসান, ভাণ্ডারিয়া উপজেলা জেপি’র যুগ্ম-আহ্বায়ক গোলাম সরওয়ার জোমাদ্দার সঙ্গে ছিলেন।