রিফিউজি কলোনীর সেই গাঁজা রফিক ডিবির জালে, কিন্তু বিলম্বে…


স্টাফ রিপোর্টার : বরিশাল শহরের আলোচিত মাদক বিক্রেতাদের একজন রফিকুল ইসলাম ওরফে রফিক প্যাদাকে অবশেষে বাগে পেল পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) ১৩ নং ওয়ার্ডের রিফিউজি কলোনীর নিজস্ব বাসা থেকে এই মাদক সম্রাটকে এক কেজি গাঁজাসমেত গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি টিম। পুলিশ জানিয়েছে, এই মাদক বিক্রেতার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে ডজনখানেক মামলা হয়েছে, যার অধিকাংশই মাদকসংক্রান্ত।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত বছরের শেষ দিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম মাদকের বিরুদ্ধে এক ধরনের জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন। তখন পক্ষকালব্যাপী অভিযানে নগরীর চিহ্নিত অসংখ্য মাদকবিক্রেতা গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে গেলেও রিফিউজি কলোনীর রফিক প্যাদা ছিল ধোরাছোয়ার বাইরে। এবং তার মাদক বাণিজ্যও বন্ধ করা যায়নি, যা নিয়ে ২০২৩ সালের ৩ অক্টোবর বরিশালটাইমস পত্রিকায় ‘পুলিশ কর্মকর্তাকে ঘুস দিতে গিয়ে গাঁজাসহ গ্রেপ্তার সেই রফিক আলেকান্দায় মাদকের ডিলার খুলেছে (!)’ একটি খবরও গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে। এরপরে তার বাসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কয়েকবার হানা দিলেও তাকে ধরতে ব্যর্থ হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সেই ঘটনার কিছুদিন পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা কমে গেলে রফিক অতীতের ধারাবাহিকতায় গাঁজা বেচা-বিক্রি শুরু করে দেয়। কিন্তু থানা পুলিশ কিংবা অন্য কোনো বাহিনী তাকে গ্রেপ্তারে আর উদ্যোগ নেয়নি। ফলে এতদিন বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনের বাসার পার্শ্ববর্তী স্থানে দেদার চালিয়ে আসছিল গাঁজা বাণিজ্য।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রফিক শুধু নিজেই নয়, তার স্ত্রীকে দিয়ে গাঁজা বিক্রি করায়। এমনকি তার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও একাধিক মাদক মামলা চলমান আছে। সূত্র জানায়, তৎকালীন এই রফিক বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন মাহিকে ঘুস দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিল, তখন পুলিশ তার বাসায় অভিযান চালিয়ে গাঁজার একটি চালান উদ্ধার করে।

বরিশাল নগর গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেলের ওই অভিযানে রফিককে তার বাসভবনের দ্বিতীয় তলার কক্ষ থেকে নগদ এক লাখ টাকা এবং এক কেজি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার করা হলেও সেখানে তার স্ত্রীকে পাওয়া যায়নি। তবে রফিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে, তাকে মাদক সোহাগ তহসিলদার ওরফে ল্যাংড়া সোহাগ নামক ত্রিশোর্ধ্ব যুবক মাদক সরবরাহ করে, যে কী না শহরের ১০ নং ওয়ার্ডে কেডিসি বস্তির বাসিন্দা।

ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) ছগির হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নিশ্চিত হয়ে রফিকের বাসায় অভিযান করা হয়। গোয়েন্দা শাখার এসি (এ্যাডমিন) তোতা মিয়ার নেতৃত্বে এসআই মো. ফিরোজ আলম এবং এএসআই মো: জাকির হোসেন ৫ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার পূর্ব পাশের একটি কক্ষ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। এবং তার কাছ থেকে নগদ এক লাখ টাকা ও এক কেজি গাঁজাও উদ্ধার করা হয়েছে।

ডিবি পুলিশ জানায়, মাদক উদ্ধার এবং গ্রেপ্তারের ঘটনায় রফিক প্যাদাকে অভিযুক্ত করে সংশ্লিষ্ট বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করা হয়েছে, এতে গাঁজা সরবরাহকারী ল্যাংড়া সোহাগও আসামি। রফিককে গ্রেপ্তার করায় গোয়েন্দা পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়েছে স্থানীয়রা।

তাদের অভিযোগ, স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশ তার মাদক বাণিজ্যের বিষয়ে এতদিন ওয়াকিবহাল থাকলেও কোনো রুপ আইনি ব্যবস্থাগ্রহণ করেনি বা তাকে গ্রেপ্তারেও উদ্যোগ লক্ষ্যণীয় ছিল না। বলা চলে ফাঁড়ি পুলিশের নির্লিপ্ততায় রফিক অনেকটা ওপেনেই গাঁজা বিক্রি করছিল। আবার এমন অভিযোগও ছিল, ফাঁড়ি পুলিশ ম্যানেজ করেই গাঁজা রফিক বাণিজ্য করেছে।

ফলশ্রুতিতে স্থানীয়দের মধ্যে এমন প্রশ্ন জাগে যে, আলোচ্চ্য রফিককে আর রোহিত করা যাচ্ছে না! কিছুটা বিলম্বে রফিক গ্রেপ্তার হলেও স্থানীয়রা সেই প্রশ্নের উত্তর এখন মিলিয়ে নিচ্ছে। এই গাঁজা ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের খবর এলাকার সুধীমহলকে স্বস্তি দিয়েছে। বিশেষ করে এ ক্ষেত্রে বেশিমাত্রায় প্রসংশিত হচ্ছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবির। এই পুলিশ কর্তা বরিশালে যোগদানের পরপরই বরিশাল শহরকে মাদকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। মূলত এরপরেই পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি পায় এবং মাদকবিক্রেতারা একে একে জালে আসতে আছে।

ওসি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বরিশালটাইমসকে জানান, তাদের শীর্ষ কর্মকর্তা মাদকের বিষয়ে জিরো ট্রলারেন্স নীতিতে থাকতে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনার আলোকেই মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে অভিযান চলছে।

এছাড়া পুলিশ কমিশনার শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে থানাগুলো ওপেন হাউজ ডে কর্মসূচি পালনেও জোরালো পদক্ষেপ রাখছেন, যেমনটি অতীতে করে প্রসংশিত হয়েছিলেন সাবেক দুই পুলিশ কমিশনার মো. রুহুল আমিন এবং মো. শাহাবুব উদ্দিন খান।

অপরাধ দমনে পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবিরের এই তৎপরতাকে সুধীমহল ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। অনেকে আবার এই দাবিও রাখছে, মাদকের পাশাপাশি রাজনৈতিক সন্ত্রাস বন্ধেও যেনো পুলিশ কঠোর পদক্ষেপ নেয়।’